ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া যা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে রুশ বাহিনীর হামলার পরিমাণ দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এখনই কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। যেকোন সময় এখানে একটি বড় আকারের বিপর্যয় ঘটতে পারে- যা কিনা পুরো ইউরোপে প্রভাব ফেলবে।
কিয়েভ থেকে বলা হচ্ছে, রুশ বাহিনী মার্চ থেকে কেন্দ্রটি দখলের পর থেকে এখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করেছে। রুশ বাহিনী কেন্দ্রটিকে সুরক্ষা হিসেবে ব্যবহার করে তাদের আক্রমণ চালাচ্ছে।
কেননা কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আঘাত করে ব্যাপক আকারে পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি নেবে না। এদিকে মস্কো থেকে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয়রা পারমানবিক কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছে দুই পক্ষ।
কেন্দ্রটিতে এখনও কর্মরত ওলগা (ছদ্মনাম), সিএনএনকে সম্প্রতি একটি ফোনকলে সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই বিপর্যয়ের আশঙ্কা এখন আর আশঙ্কা নেই, এটি এখন ক্রমশ বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ৩৫-৪০ শতাংশ কর্মচারী কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছে। এই কমে আসা কর্মচারীদের সংখ্যা ও গোলাবর্ষণের ফলে কাজের পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) জাতিসংঘের নিষেধাক্কা সত্ত্বেও দু'পক্ষ আবারও পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণে জড়ায়। আন্তর্জাতিক পারমানবিক শক্তি সংস্থা প্রধান রাফায়েল গ্রসি জানান, সাম্প্রতিক হামলায় কেন্দ্রটির অবস্থা আশংকাজনক।
কেন্দ্রটির অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়ায় এতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রবল। এখনই বিশেষজ্ঞ দলের কেন্দ্রটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য যাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ।
এনার্জোয়াটম, ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কোম্পানি রুশ বাহিনীকে দায়ী করে বলে, গোলাবর্ষণের ফলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটি টেলিগ্রামে বলে, কেন্দ্রটি বর্তমানে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশংকা ও অগ্নিনির্বাপণ সুরক্ষা ব্যবস্থার কমতি নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে মঙ্গলবার রাতভর চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়। একইভাবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতভর গোলাবর্ষণে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে একজন ১৩ বছর বয়সী কিশোরী রয়েছে।
ওলগা সিএনএনকে আরও বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে রুশ বাহিনী ক্রমাগত তাদের অস্ত্রের মজুদ বাড়িয়ে চলেছে। এসব জায়গায় কর্মচারিদের প্রবেশ নিষেধ।কেন্দ্রটির বর্তমান অবস্থা পারমাণবিক বিপর্যয়ের আশংকামুক্ত রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষরা জানান। কিন্তু গ্রসি বৃহস্পতিবার বলেন, এই পরিস্থিতি যেকোন সময় পরিবর্তন হতে পারে।।
জি-৭ বুধবার জার্মানিতে তাদের সাম্প্রতিক সম্মেলনে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে রাশিয়াকে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখলদারিত্ব ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেখানে আরও বলা হয়, যেন রাশিয়া দ্রুত ইউক্রেনের কাছে কেন্দ্রটির সকল ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
বিবৃতিতে রাশিয়াকে দায়ী করে বলা হয়, রুশ বাহিনীর কর্মকাণ্ড ক্রমশ আতংকের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যা কিনা ইউক্রেন ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে একটি বড় পারমাণবিক বিপর্যয়ের হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের এক মুখপাত্র জানান, রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু দাবি জানানো হয়।
এরমধ্যে প্রধান দাবি হলো, রাশিয়া যেন ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে সামরিক হামলা বন্ধ রাখে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা থেকে সামরিক বাহিনীর সরিয়ে নেয়।