শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এক পায়ে স্বপ্ন জয়

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৫৪

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অদূরে অবস্থিত বাঁকড়া গ্রাম। ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বরে এই গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির ঘর আলোকিত করে ভূমিষ্ট হয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রাখা হলো তামান্না নুরা। তবে জন্মগতভাবে তার দুটি হাত ও একটি পা নেই। শুধু আছে বাম পা, তাও অসম্পূর্ণ। রওশন-খাদিজা দম্পতি শপথ করেন— প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আর দশজন  সাধারণ শিশুর মতো তামান্নাকেও বড় করবেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য তৈরি করবেন।

একটু বড় হতেই বোঝা গেলো—বাবা মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তামান্নাও পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রথমে মুখে কলম রেখে লেখানোর চেষ্টা করে পরিবার। কিন্তু এভাবে অভ্যস্ত হতে পারছিলেন না তামান্না। পরে পায়ের আঙুলের মধ্যে কলম নিয়ে নিজে নিজে লেখার চেষ্টা করে তামান্না সফল হন।বয়স ৬ বছর হলে তাকে স্কুলে ভর্তি করা  হয়। হুইল চেয়ারে করে বাবা প্রতিদিন তাকে স্কুলে আনা নেওয়া করতেন।

পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীতে পা দিয়ে লিখে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ নিয়ে মাধ্যমিকের সীমা পার হন ২০১৯ সালে। উচ্চমাধ্যমিকেও সর্বোচ্চ সাফল্য নিয়ে উত্তীর্ণ হলেন। এবার পালা উচ্চশিক্ষার। তামান্নার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল চিকিত্সক হওয়ার। তবে এই স্বপ্নে পরাজিত হতে হয় বাস্তবতার কাছে এবং শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি। অংশ নেন গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ‘ক’  ইউনিটে।

৩০ জুলাই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে ভর্তি পরীক্ষায় বসেন তামান্না। এবারও তামান্নার মুখে বিজায়ের হাসি। ৪৮.২৫ নম্বর পেয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইত্তেফাক প্রজন্মকে তামান্না বলেন, ‘সুযোগ পেলে মাইক্রো-বায়োলজিতে পড়ার ইচ্ছা আছে। তবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে আমার জন্য সুবিধা হতো।’ এই অদম্য মেধাবীর সাথে মোবাইলে কথা বলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, শিক্ষামন্ত্রীসহ অনেকেই। প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে যেকোনো ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তামান্না অবসরে ছবি আঁকতে ভালোবাসেন।

ইত্তেফাক/এসটিএম