বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অভিব্যক্তি প্রকাশে 'ইমোজি': তরুণদের ভাবনা কী

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:০১

মানুষ হাত-পা এবং মুখের নানা অঙ্গভঙ্গির সাহায্যে মনের যে ভাব ফুটিয়ে তোলে, একসময় সেটিই ছিল ভাব আদান-প্রদানের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান সময়ে ভাব বা অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম যেন বদলে গেছে। প্রযুক্তির বদৌলতে সবার হাতেই এখন মুঠোফোন, আর সেই মুঠোফোনের পর্দায় নানা রকম ইমোজিই হয়ে ওঠেছে নিজের মনোভাব প্রকাশের অন্যতম উপায়।

এখন মানুষ বেশিরভাগ সময়েই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয় সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমো, টেলিগ্রাম-সহ সব অ্যাপেই রয়েছে একধরনের কার্টুন সিম্বল বা চিহ্ন, যা মুখাবয়বের আদলে হাসি-কান্না, রাগ কিংবা হতাশা বোঝায়। এধরনের চিহ্নগুলোকে বলা হয় ইমোজি। এখনকার মোবাইল ফোনগুলোর মেসেজ অপশনেও বিভিন্ন ধরনের ইমোজি দেওয়া থাকে, একজন ব্যবহারকারী চাইলেই তার টেক্সট মেসেজের সঙ্গে ইমোজি জুড়ে দিয়ে অপর প্রান্তের মানুষটির কাছে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেন। তবে ইমোজির ব্যবহার নিয়ে অনেকেরই রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই এতে অভ্যস্ত হলেও কেউ কেউ ইমোজির ব্যাপারে ততোটা পটু নন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সেতু বলেন, খুব অল্প শব্দ চয়নে যখন অনুভূতিগুলো ব্যক্ত হয়, সে যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি। বিভিন্নধরনের মুখভঙ্গিমার ইমোজি এখন আবেগ প্রকাশে নতুন সংযোজন এনেছে। টেক্সটিং নির্ভর এই যুগে এখন ইমোজি হয়ে উঠেছে অনুভূতির সহজাত বাহক। শহুরে জীবনে বেশিরভাগ সময়ই আমরা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকি। অনেক কথার পরিবর্তে ইমোজির দ্বারাই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করি।

গণমাধ্যমকর্মী মামুন সোহাগ বলেন, পাশে বসা মানুষটাকে চোখের ইশারায় যেমন কিছু ইঙ্গিত করা যায় ঠিক তেমনই ইমোজি বা স্টিকার ব্যবহার করেও তা করা যায়। মোদ্দাকথা, টেক্সট-নির্ভর সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থায় ইমোজি বাড়তি সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে। 

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, একটা সময় ছিল যখন আমরা আমাদের অনুভূতিগুলো মনে পুষে রাখতাম, অনুভূতি এখন আর মনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেন হাতের মুঠোফোনের পর্দায় চলে এসেছে। কিবোর্ড প্রেস করে অথবা সংবেদনশীল পর্দার মুঠোফোনে ছোট এক স্পর্শেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যাচ্ছে অনেকটাই। 

তবে সরকারি তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন বলেন, আমাদের মানসিক যে প্রবৃত্তি, আমাদের মনের গভীরে সুপ্ত যে অনুভূতি এটা আসলে ভার্চুয়ালি পূর্ণ প্রকাশ পায় না। ভার্চুয়াল ইমোজি দিয়ে হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য কাছের মানুষদের অনুভূতি বুঝানো সম্ভব হয়, তবে এটা ক্ষণস্থায়ী। অনুভূতি বুঝতে হলে প্রতিটি মানুষকে মুখোমুখি হতে হয়, ফেসবুক বা মেসেঞ্জারে এ অনুভূতি শতভাগ প্রকাশ করা যায় না। উল্টো ভুল বোঝাবুঝিও হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ জাহান আশিক বলেন, দুঃখ, সুখ, রাগ, হতাশা, উল্লাস, ব্যথা, বাসনা, বিরক্তি প্রভৃতি সকল অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন-ভিন্নভাবে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তাই কারো প্রকৃত অনুভূতিকে বুঝতে হলে তার সাথে সরাসরি কথা বলার বিকল্প নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মোটামুটি সকল অনুভূতিকে ইলেকট্রনিক্যালি প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত জনপ্রিয় মাধ্যম- ইমোজি। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এসকল ইমোজির বিভিন্নতা থাকলেও তাদের উদ্দেশ্য একটাই- আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করা। কিন্তু বাস্তবিক অনুভূতি আর ভার্চুয়াল জগতের অনুভূতি প্রকাশের মধ্যে একটা বিরাট গ্যাপ রয়েছে যার কারণে ভার্চুয়াল অনুভূতির সত্যতা যাচাই করা সত্যিই দূরুহ। একজন মানুষ কষ্টে থেকেও সুখের ইমোজি ব্যবহার করতে পারেন, কিংবা সুখে থেকেও কষ্টের ইমোজি ব্যবহার করতে পারবেন।

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার্থী রুখসানা রহমান বর্ষা বলেন, শুধু শব্দ বা ইমোজি ব্যবহারের চেয়ে শব্দের সঙ্গে ইমোজি জুড়ে দিলে তা যোগাযোগে দারুণ প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছা, ভালোবাসা, বেদনা, এমনকি সাময়িক নীরবতার ভাষাও হয়ে উঠেছে ইমোজি।

ইত্তেফাক/এসটিএম