পৃথিবীতে কত বিচিত্র ধরণের বই আছে তার তালিকা করা মুশকিল৷ বইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ পাঠককে আকৃষ্ট করে, বই সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। বাংলা সাহিত্যে আমরা দেখেছি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে লেখা বইয়ের কি দারুণ প্রচ্ছদ! একটি প্রচ্ছদই ধারণা দিয়ে দেয় বইয়ের ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে।প্রচ্ছদশিল্পীর নিপুন হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ লাভ করে বইয়ের মলাট।
আজ একজন নিভৃতচারী প্রচ্ছদশিল্পীর গল্প বলবো। তিনি আশরাফুল ইসলাম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপচিত্র বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন৷ শখের বসে আঁকেন প্রচ্ছদ। বইমেলা কিংবা বইমেলার বাইরে যেসব বই প্রকাশিত হয়, এমন বেশকিছু বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। ভিন্নধর্মী ধারণা, ব্যতিক্রমী কালার কম্বিনেশন ব্যবহার করে তিনি প্রচ্ছদ আঁকেন।
প্রচ্ছদ আঁকার মাধ্যম সম্পর্কে জানতে চাইলে আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আমি রঙ-তুলি ব্যবহার করেও আঁকি, গ্রাফিক্সের সাহায্য নিয়ে ডিজিটাল মাধ্যমেও আঁকি৷ প্রথমে লেখার বিষয়বস্তু জেনে আমি নির্ধারণ করি কোন মাধ্যমে ছবিটি আঁকবো।'
প্রচ্ছদ আঁকার কাজটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেবেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছি। প্রচ্ছদ আঁকি শখের বসে৷ গল্প পড়ে সেই গল্পটাকে রঙ-তুলিতে মূর্ত করার মাঝে আলাদা অ্যাডভেঞ্চার কাজ করে৷ প্রতিটা প্রচ্ছদে আলাদা অ্যাডভেঞ্চার, আলাদা রোমাঞ্চ। এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়ার লোভ সংবরণ করা কঠিন।'
তিনি বলেন, 'সচরাচর আমি তেমন কোনো চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করি না৷ আমি মনে করি আমার আঁকা একেকটা প্রচ্ছদই একেকটা এক্সিবিশন। বই প্রকাশিত হওয়ার পর যে কয়জন লোক বইটা কিনলো, তাদের কাছে কিন্তু আমার আঁকা শিল্পকর্মটা পৌঁছে গেল। বইয়ের মলাটে মলাটে এভাবে আমার সৃষ্টিকর্ম জনমানুষের কাছে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটাও তো এক প্রকার প্রদর্শনী। নিভৃতচারী এই প্রচ্ছদশিল্পী নিজের মনে ছবি আঁকেন। আশরাফুলের ক্যানভাস নামক একটা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তিনি তার সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শন করেন। কাজের অর্ডার নেন। তার আঁকা শিল্প প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে আরও বহু মানুষের বুকশেলফে ছড়িয়ে যাবে, এটাই তার প্রত্যাশা।