রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বকশিস হয়রানির শিকার হয়েছেন হাসপাতালের ডাক্তার এ.বি.এম রাশেদুল আমীর। এখানে শুধু ডাক্তারই নন রোগী ও তাদের স্বজনদের নানা প্রকারের হয়রানির ঘটনা এখানে নিত্য দিনের। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর পর কান্নায় আত্মহারা স্বজনদের দিতে হয় ‘বকশিস’ নামের উৎকোচ। রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে উৎকোচ বা বকশিস ছাড়া অসুস্থ মানুষের সেবা পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বকশিস না পেলে রোগীর স্বজনদের ওপর চড়াও হওয়া থেকে শুরু করে মার-ধরের ঘটনা ঘটে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। দালাল ও বিভিন্ন পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো বকশিস সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের কাছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যেন জিম্মি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে বকশিস দাবি করছেন চুক্তিভিত্তিক সিন্ডিকেটের কয়েকজন কর্মচারী। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, সেখানে দেখা যায় তিনজন কর্মচারী এসেছেন কর্মকর্তার কাছ থেকে বকশিস নিতে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন চিকিৎসক এ.বি.এম রাশেদুল আমীর। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট। বকশিস চাওয়ার এ ঘটনা এবং রোগী হয়রানি প্রসঙ্গে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বরাবর গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন চিকিৎসক এ.বি.এম রাশেদুল আমীর।
চিকিৎসক রাশেদুল আমীর অভিযোগে বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা। জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য ২৫০ টাকা দাবি করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মা পরিচয় জানতে পেরে তারা ৫০ টাকা ভর্তি বাবদ নেন। যদিও হাসপাতালে নির্ধারিত ভর্তি ফি ২৫ টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তার মা ও অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে ভর্তি ফি না নেওয়ার কথা।
তিনি অভিযোগ করেন, ভর্তি পরবর্তী সিসিইউতে তার অসুস্থ মাকে নেওয়া হলে সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত দুজন জোর পূর্বক তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে ২০০ টাকা বকশিস নেন। এসময় তাদের আমার নাম পরিচয় এবং রোগী সম্পর্কে জানানো হলে তারা বলে ‘যে স্যারের মা হোক টাকা দিতে হবে’। পরবর্তীতে আমি রাতে আসার পর মায়ের শয্যার পাশে অবস্থানকালে সিসিইউতে কর্মরত ওয়ার্ড বয় পরিচয়ধারী মাসুদ আমার কাছে সরাসরি টাকা দাবি করে। এসময় আমি সেই কথাবার্তার কিছু মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করি। এই ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত মানসিক পীড়াদায়ক ও অপমানকর। যে প্রতিষ্ঠানে আমি সেবা দিয়ে যাচ্ছি, সেখানে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি তা সত্যি দুঃখজনক। আমি নিজে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা হয়ে যদি হয়রানির শিকার হই, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা তো সহজেই বোঝা যায়।
এ ঘটনায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি মেয়র, রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এ অভিযোগ করেছেন এ.বি.এম রাশেদুল আমীর।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী চিকিৎসক ও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে ওয়ার্ডবয় মাসুদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।