বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রভাব

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৩৯

যে কোনো দেশের বা ব্যক্তির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে অর্থনীতি। এটার অবস্থা যে দেশের যত ভালো, সে দেশ তত উন্নত। প্রত্যেকটি দেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতি বা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পলিসি গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। কেননা অর্থনীতি আমাদের জাতীয় জীবনের নিরাপত্তার ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করে। সরকার ছাড়া যেমন একটি রাষ্ট্র হতে পারে না, তেমনি সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনা বিহীন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মিরাকেল সম্ভব নয়। অর্থনৈতিক  উন্নয়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জাতি, অঞ্চল, স্থানীয় সম্প্রদায় বা কোনো ব্যক্তির অর্থনৈতিক কল্যাণ ও জীবনযাত্রার মান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসারে উন্নত করা। অর্থনৈতিক মিরাকেল হচ্ছে একটি সময়কাল যা প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চেয়ে দ্রুত। একটি দেশের অর্থনৈতিক মিরাকেল, দেশের জিডিপি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে অনেকাংশে আকাশচুম্বী করে তোলে।

অর্থনৈতিক মিরাকেলে রাজনৈতিক ফ্যাকটর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ান দেশগুলোতে দেখা যায় কীভাবে তারা অর্থনীতিতে এতটা উন্নত।  একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রভাবিত হয় সামগ্রিক অর্থনীতির কতগুলো উপাদানের মাধ্যমে—যেমন শ্রমিক, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান, সুদের হার, বিনিয়ম হার, বিদেশি বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য। সামগ্রিক অর্থনীতির উপাদানগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক ফ্যাকটরগুলো দেশের অর্থনৈতিক মিরাকেলে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক ফ্যাকটর বলতে সরকারের নেতৃত্বের গুণাবলি, পলিটিক্যাল উইল, সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচি (PPP) বা ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা,সরকারি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করানো ইত্যাদি। ১৯৭৮ সালে চীন ও ভারতের জিডিপি (GDP) একই থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে চীন অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের চেয়ে অনেক উন্নত এবং সেটা ৫ গুণ। সে সময় চীন  অর্থনৈতিক উন্নয়নে দ্রুত বিভিন্ন পলিসি গ্রহণ করে এবং  বাস্তবায়ন করে। অন্যদিকে ভারত ধনতান্ত্রিক নাকি সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা গ্রহণ করবে—এই সিদ্ধান্ত নিতে ১৫ বছর কেটে যায়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকায় চীন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও ভারত ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে, বর্তমানে চীন ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল পার্থক্য বিদ্যমান আর সেটা সম্ভব হয়েছে পলিটিক্যাল উইলের নিমিত্তে।

পাকিস্তানের স্বাধীনতার বয়স প্রায় ৭৫ বছর হলেও কোনো সরকার পাঁচ বছর তার শাসনকার্য চালিয়ে যেতে পারেনি। তাই পাকিস্তানের অর্থনীতি ধসের কারণ হিসেবে থাকতে পারে রাজনৈতিক ফ্যাকটর। ঠিক তেমনি, রাজা পক্ষের সঠিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার অভাবে শ্রীলঙ্কার নাজেহাল অবস্থা। রাজনৈতিক ফ্যাকটরগুলোর কারণে পূর্ব এশিয়ার দেশ যেমন  সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়া আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

সিঙ্গাপুর আয়তনে ছোট্ট হলেও অর্থনীতিতে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক উন্নত। গত শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বব্যাংক ১৯৯৩ সালে পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের ওপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিষয়ে জরিপ করে দেখেছে, দেশগুলো কিনেসিয়ানের অর্থনৈতিক তত্ত্ব অনুসরণ করছে। কিনেসিয়ানের তত্ত্ব বলতে সরকার ব্যক্তিগত প্রজেক্টগুলো দেখভাল করবে এবং প্রয়োজনে অর্থ বিনিয়োগ করে সাহায্য করবে। দেশের একজন নাগরিক কোনো প্রজেক্ট হাতে নিলে সরকার অর্থ বিনিয়োগ করে অথবা প্রশাসনিক সহযোগিতা করছে।  

ফলে, সহজেই দেশগুলোতে প্রজেক্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আকারের পরিবর্তন হচ্ছে এবং ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ কিনেসিয়ানের অর্থনৈতিক তত্ত্ব অনুসরণ করলেও সেটা খাতায়-কলমে আছে, বাস্তবে তেমন একটা নেই। একজন ব্যক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নে কিংবা কর্মসংস্থান তৈরিতে মনোনিবেশ করে যখন একটি প্রকল্প হাতে নেয়, সরকারের দায়িত্ব অর্থ বিনিয়োগ কিংবা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা। 

এমনকি সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় ছোটখাটো শিল্প কিংবা প্রজেক্টগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পোশাক শ্রমিক বাহিনী ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি তর তর করে বৃদ্ধি পাবে যদি সরকার প্রাইভেট প্রোজেক্টগুলোতে সহযোগিতা করে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, অর্থ পাচারে সোচ্চার হয় এবং রাজনৈতিক ফ্যাকটরের প্রতি গুরুত্বারোপ করে তাহলে বাংলাদেশ ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন