রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

পোল্যান্ডে স্ল্যাকলাইন উৎসবে নজর-কাড়া কসরত

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২২, ২৩:৩৯

গ্রামেগঞ্জে দড়ির উপর হাঁটার কসরত প্রায়ই চোখে পড়ে। কিন্তু স্ল্যাকলাইন সেই কৌশলকে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। পোল্যান্ডের একটি শহরে প্রতি বছর বিশ্বের সেরা স্ল্যাকলাইন কুশলীদের চোখ ধাঁধানো কসরত দেখা যায়।

পোল্যান্ডের লুবলিন শহরে বছরে চার দিন সবার নজর থাকে উপরের দিকে। শহরের ঐতিহাসিক প্রাণকেন্দ্রে বিপজ্জনক উচ্চতায় স্ল্যাকলাইনররা তাদের চোখ-ধাঁধানো কসরত দেখান। ২০২২ সালের আর্বান হাইলাইন ফেস্টিভালে ১৫টি দেশের একশরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হয়েছিলেন। তারা এসেছেন কলম্বিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ইউক্রেন বা লিথুয়েনিয়া থেকে।

উৎসবের অন্যতম তারকা ছিলেন পোল্যান্ডের স্ল্যাকলাইনার ফিলিপ ওলেকস্লিক। এই নিয়ে সাত বার তিনি উৎসবে অংশ নিলেন। তিনি স্ল্যাকলাইনটিকে ট্র্যাম্পোলিন হিসেবে ব্যবহার করেন। তার উপর লাফঝাঁপ করেন, শূন্যে ঝাঁপিয়ে ঘুরে যান বা অন্যান্য কসরৎ দেখান। ক্যারিবীয় অঞ্চল হোক, দুবাই বা মেক্সিকো – সব জায়গায় ফিলিপ চোখ-ধাঁধানো কৌশল দেখাতে পছন্দ করেন। আর্বান হাইলাইন ফেস্টিভালে তিনি এক কর্মশালায় নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও পরামর্শও তুলে ধরেছেন।

স্ল্যাকলাইনের উপর সফলভাবে কসরত করতে হলে শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানসিক অবস্থাও স্থিতিশীল থাকতে হবে। কলম্বিয়ার এক স্ল্যাকলাইনার এ বিষয়ে বলেন, ‘‘আমার কাছে স্ল্যাকলাইন হলো নিজের সঙ্গে সংযোগের একটা সুযোগ, সেই মুহূর্তে নিজেকে সঁপে দেওয়ার মতো। বাস্তবকে অনুভব করে নিজের শরীর বোঝার সেই মুহূর্তকে আমরা ‘ফ্লো মোমেন্ট' বলি।''

উৎসবে যোগ দিতে আসা আর এক জন স্ল্যাকলাইনার বলেন, ‘‘সে সময়ে কেউ নিজের পা, দড়ি বা দোলনরত লাইনের দিকে তাকায় না। সামনে লক্ষ্যের দিকে সোজা তাকাতে হয়।''

সবকিছু ছেড়ে দিয়ে সেই মুহূর্তে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন ইউক্রেনের নারী নাটালিয়া ড্রোস্ট। চার দিনের এই উৎসব তাঁকে নিজের দেশের যুদ্ধের পরিস্থিতি ভুলে থাকতে সাহায্য করেছে। নাটালিয়া বলেন, ‘‘এই ফেস্টিভাল আমাকে অনেক সাহায্য করছে, কারণ আমি স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পাচ্ছি। পাঁচ মাস ধরে এমন অনুভূতি হয় নি। এখানে কোনো এয়ার সাইরেন নেই। ইউক্রেনে রাত ১১টার পর পথে বের হওয়া নিষেধ। অথচ এখানে আমি সেটা করতে পারি। এখন বুঝতে পারি, যে এই যুদ্ধের কারণে আমরা কত কী হারিয়েছি! আমাদের শান্তি, আমাদের স্বাভাবিক জীবন। বুঝছি সে সব কী মূল্যবান।''

উৎসবের সব আয় এ বছর ইউক্রেনের জন্য দান করা হচ্ছে। ইউক্রেনের অংশগ্রহণকারীদের কোনো মাসুলও গুনতে হচ্ছে না।

চলতি বছরেও শহরের মাঝে দুটি গির্জার চূড়ার মাঝে ২৫ মিটার উচ্চতায় ‘চার্চলাইন' নামের দড়ি টাঙানো হয়েছে। ফেস্টিভালের আটটি হাইলাইনের মধ্যে এটিই সবচেয়ে উঁচু। সেই উচ্চতায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হয়, প্রচলিত স্ল্যাকলাইনের মতো খোলামেলা পরিবেশ সম্ভব নয়। এমনকি ফিলিপ ওলেক্সিকের মতো অভিজ্ঞ মানুষেরও সেটির প্রয়োজন হয়। পায়ের নীচে মাত্র আড়াই সেন্টিমিটার চওড়া দড়ি ছাড়া কিছুই নেই। তিনি বলেন, ‘‘যারা পার্কে দুটি গাছের মাঝে দড়ির উপর হাঁটতে পারে, আমি এমন মানুষকে চিনি। তবে তারাও হাইলাইনে যেতে পারবে না। সেই উচ্চতায় তাদের ভয় করবে। সেটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। নীচের উচ্চতার সঙ্গে সংগ্রামই সবচেয়ে মজার বিষয়। এমন উচ্চতায় পায়ের নীচে এমন শূন্যতায় আমিও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমি চারিদিকে, আমার পায়ের নীচে মানুষের হাঁটা দেখতে পাই। ফলে আমার বেশ ভয় করে বৈকি।''

সব দিক থেকেই এই ক্রীড়ায় চরম চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এত বেশি সাহস না থাকলেও ফেস্টিভালে কম ঝুঁকিপূর্ণ কসরতও করা যায়। কারণ সবে স্ল্যাকলাইন শুরু করেছেন, এমন মানুষদেরও স্বাগত জানানো হয়। উৎসবের আয়োজক ভইচেখ সিয়েনকো বলেন, ‘‘এখানকার পরিবেশ বেশ মনোরম। এটাই এই ধরনের প্রথম উৎসব। সে কারণে এটির বিশেষ গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। মানুষকে আকর্ষণ করতে আমাদের ঢাকঢোল পিটিয়ে বিজ্ঞাপন করতে হয় না।''

আগামী বছরও এই ফেস্টিভাল আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তখনও আন্তর্জাতিক স্ল্যাকলাইন জগতের কুশিলবরা ১৫ বারের মতো লুবলিনে মিলিত হবেন।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি