শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশ্ব ডিম দিবস ২০২২

প্রতিদিন একটি ডিম পুষ্টিময় সারা দিন

আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০৩:২৮

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ডিম মানুষের জন্য মূল্যবান খাদ্যসামগ্রী হিসেবে ব্যবহূত হয়ে আসছে। ধারণা করা হয়, ৭৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ও ভারতীয় উপমহাদেশে ডিমের জন্য বন্য মুরগি পালন করা হয়। সুম ও মিশরে মুরগি আনা হয় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। এবং ৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে ডিমের জন্য মুরগি আনা হয় গ্রিসে। ডিম সম্পর্কে নানা কুসংস্কার থাকা সত্ত্বেও সহস্রাধিক বছর ধরে মানুষ ডিম খেয়ে আসছে। দুনিয়ার সব জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে ডিম একটি সহজলভ্য, সাশ্রয়ী ও গ্রহণযোগ্য খাবার। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর ডিম পাওয়া যায়। তবে সব থেকে জনপ্রিয় হচ্ছে মুরগির ডিম। ডিম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সব বয়সের মানুষ ডিম খেতে খুব পছন্দ করে।

ডিম বর্তমানে সারা বিশ্বে সুপারফুড নামে পরিচিত। এটি নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন বি-৫, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, বায়োটিন, কোলিন, ফলিক অ্যাসিড, আয়োডিন, আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়ামসহ ১৩টি ভিটামিন ও মিনারেলস এবং ৬ গ্রাম উন্নতমানের প্রোটিন। ডিমের নানা পুষ্টিগুণের মধ্যে উল্লেযোগ্য হলো প্রোটিন। এই প্রোটিনে রয়েছে ৯টি জরুরি অ্যামাইনো অ্যাসিড। এটি পেশি গঠন, মজবুত ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে। তাছাড়া ডিমে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল, যা কিনা মস্তিষ্কের সেল গঠনে সহায়তা করে। ফলে সুস্থ মস্তিষ্ক গঠন করে।

এছাড়া ডিমে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি-১২ সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। কিছুদিন আগেও হূদেরাগের ক্ষেত্রে ডিমের ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন গবেষণা বলছে, প্রতিদিন একটি ডিম খেলে হূদেরাগের ঝুঁকি কমে যেতে পারে অনেকটাই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের কিছু পুষ্টি উপাদান গর্ভাবস্থায় খুব জরুরি। বিশেষ করে ডিম জন্মগত ‘স্পাইনাল বিফিডা’ রোগের ঝুঁকি কমায়। ডিমে থাকা  লুটেইন ও জিয়েক্সাথিন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে। তাছাড়া ডিমের অন্যান্য ভিটামিনও ভালো দৃষ্টিশক্তির জন্য সহায়ক। এছাড়া স্থূলকায় মানুষের জন্যও ডিম উপকারী। ডিম খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না। সেই সঙ্গে এনার্জিও পাওয়া যায়।

পাওয়ার হাউজ অব নিউট্রিশন নামে পরিচিত এই ডিম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। ‘প্রতিদিন একটি ডিম পুষ্টিময় সারা দিন’—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ১৪ অক্টোবর শুক্রবার পালিত হচ্ছে দিবসটি। নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডিমকে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করে খাওয়া যায়। ডিমকে ভাজা, পোচ, সিদ্ধ, আধা সিদ্ধ করে খাওয়া ছাড়াও কেক, প্যানকেক, হালুয়া, স্যান্ডউইচ, সালাদ, চপ, পুডিং, বিরিয়ানি, নুডলস, পিঠা ইত্যাদিতে ব্যবহার করে খাওয়া যায়।

ডিমকে বিশ্বে একটি উন্নতমানের ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) স্থাপিত হয়। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন, মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে, সহায়ক উপাদান ডিমের পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম পালিত হয় ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। তখন থেকে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার দিবসটি বিশ্ব জুড়ে একযোগে পালিত হয়ে আসছে। ডিমের উত্পাদন বৃদ্ধি এবং ডিম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি)-এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালন করে আসছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারতসহ সারা বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে পালিত হয় ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। এবং এর পরিধি ও ব্যাপ্তি সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই সংস্থার সদস্য ৮০টি দেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ অ্যানিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটি (বিএএএস) ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন’-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হয়।

বাংলাদেশের গবেষক, চাষি ও খামারিদের আপ্রাণ চেষ্টায় ডিম উত্পাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর-সংস্থার গবেষণা ও খামারিদের পরিশ্রমের ফলে দেশে ডিমের মোট উত্পাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৫ দশমিক কোটি। ফলে বছরে জনপ্রতি ডিমের প্রাপ্যতা বেড়েছে ১৩৬ দশমিক ০১টি। যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ডিম উত্পাদন হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৩ দশমিক ৩১ কোটি।

এ ধরনের প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে একদিকে মানুষের পুষ্টিচাহিদা যেমন পূরণ হবে, অন্যদিকে উত্পাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করে কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি পাবে। সর্বোপরি ডিম নিয়ে আমাদের দেশে অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এ মানুষের মধ্যে ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার ফলে দেশের আপামর মানুষ যদি পরিমাণমত ডিম খায়, তবে অপুষ্টির চিত্র পুরোপুরি পালটে ফেলা সম্ভব হবে।

লেখক: গণযোগাযোগ কর্মকর্তা, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর

ইত্তেফাক/জেডএইচডি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন