মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড, থানা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থাকার পরও শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলাধীন পদ্মা নদী ও নদীর সীমানা এলাকাগুলোতে অবাধে শিকার করা হচ্ছে মা-ইলিশ। পদ্মার সুরেশ্বর, চরমোহন, দুলার চর, কাঁচিকাটা, চরাত্রা, চরভাগা, তারাবুনিয়া, মাঝেরচর ও রাজরাজেশ্বর পয়েন্টে কয়েক হাজার নৌকা প্রতিদিনই শিকার করে চলছে মা-ইলিশ। এসব নৌকার বেশির ভাগই বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে এখানকার অসাধু আড়তদাররা।
মা-ইলিশ বিক্রির জন্য এসব এলাকার প্রায় ৬০ পয়েন্টে বসানো হয়েছে শত শত অস্থায়ী আড়ত। যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ইলিশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আড়ত বসে পদ্মার সুরেশ্বর পয়েন্টের বাংলাবাজার, দুলার চরের ইল্লার বাজার, উত্তর তারাবুনিয়ার চেয়ারম্যান ইউনুস মোল্লার বাজার ও গৌরাঙ্গ বাজার এলাকায়। এদিকে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ভেদরগঞ্জে ৬২ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে ও মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মা-ইলিশ রক্ষার্থে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। কিন্তু সরকারের আইন ভঙ্গ করে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া উপজেলার সীমানায় পদ্মার সুরেশ্বর পয়েন্টে শত শত নৌকায় ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। শিকার করা মা-ইলিশ নিয়ে আসা হচ্ছে সুরেশ্বরের বাংলাবাজার ও নদীর পাড়ের বিশাল এক আড়তে। সেখানে রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টির ওপর অস্থায়ী আড়ত। এ আড়তকে কেন্দ্র করে ভিড় করছেন বিভিন্ন জেলা উপজেলার শত শত ক্রেতা-বিক্রেতা। সেখানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মা-ইলিশ।
এছাড়া চরমোহন এলাকায় তিনটি ও কাঁচিকাটা ইউনিয়নের দুলার চরে রয়েছে ছয়টি আড়ত, বোরকাঠিতে রয়েছে দুইটি, কাঁচিকাটা ও মরিচাকান্দিতে সাতটি, চরভাগা ইউনিয়নে চারটি, উত্তর তারাবুনিয়া ছুরিরচর ব্যাপারীবাজারে চারটি, মাঝেরচর দেওয়ান বাজারে তিনটি ও ইউনুস মোল্যার বাজারে ৬০টি, কুবুদ্ধিঘাট দুইটি, নতুন বালাবাজার দুইটি, বাঁশগাড়ির চরে রযেছে ছয়টি আড়ত। এসবের বেশির ভাগই অস্থায়ী আড়ত। এসব আড়তের অন্তর্ভুক্ত হাজার হাজার নৌকা প্রতিদিন পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে মা-ইলিশ শিকার করে। আর সড়ক-মহাসড়ক, নৌপথে উন্মুক্তভাবেই পরিবহন করা হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মা-ইলিশ রক্ষা অভিযানে পর্যাপ্ত জনবল, বাজেট, স্পিডবোট ও জ্বালানি না থাকায় আমরা টার্গেট অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।
এ বিষয়ে নরসিংহপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফেরদৌস বলেন, চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত আমরা একটি স্পিডবোট, তিনটি নৌকাসহ জাল এবং ১৬ জেলেকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। মোবাইল কোর্ট বাদে সাতটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, রাতদিন মা-ইলিশ রক্ষা অভিযান চলছে। ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়ে সত্যিকারের জেলেরা মাছ ধরেন না। প্রকৃত জেলেরা নদী এবং নদীর মাছকে আগলে রাখতে চান, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে নদীতে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। জেলায় ২৫ হাজার ৫৮ জন নিবন্ধিত জেলে আছেন। তাদের মধ্যে ১৯ হাজার জেলেকে ৪৭৫ টন চাল দেওয়া হচ্ছে। প্রতি জেলে ২৫ কেজি করে চাল পাচ্ছেন।