বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ে শিল্প উৎপাদনে ধস, বিপর্যস্ত জনজীবন

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৪:৩১

চট্টগ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিল্প কারখানায় উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রামে লোডশেডিং অনেক বেশি। দিনেরাতে একাধিক বার টানা এক ঘণ্টার অধিক সময় লোডশেডিং করা হচ্ছে। পিডিবি জানায় বিদ্যুতের বরাদ্দ স্বল্পতায় লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াটের লোডশেডিং করা হচ্ছে। পিডিবি জানায়, চট্টগ্রামে ভারী ও হাল্কা শিল্প কারখানার জন্য দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। কিন্তু সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৯০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লোডশেডিং বেড়ে গেছে।

জানা যায়, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চট্টগ্রামে শিল্পে উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। শিল্প এলাকা ছাড়াও নগরী জেলায় বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছোটবড় শিল্প কারখানা রয়েছে। শিল্প এলাকায় বিদ্যুতের আলাদা লাইন রয়েছে। তারপরও যখন তখন লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগেভাগে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। ঘনঘন বিদ্যুতের আসাযাওয়ায় কারখানার মূল্যবান মেশিনের ক্ষতিসাধন করছে। 

শিল্পমালিকরা জানান, আগেভাগে জানা থাকলে শ্রমিক কর্মচারীতে কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে উৎপাদন চালানো যেত। কিন্তু লোডশেডিংয়ের শিডিউল জানা না থাকায় লোডশেডিংয়ের সঙ্গে শ্রমিকদের কাজের সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহাবুবুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, বিদ্যুতের ঘনঘন আসাযাওয়া শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে মেশিন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। আমরা বলেছিলাম, শিল্প এলাকায় লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঠিক করে দেওয়ার জন্য। তখন শিল্পমালিক কাজের সমন্বয় করে উৎপাদন করতেন। এখন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’

বিজিএমইএ-র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ডিজেলের মাধ্যমে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এখন বিদেশি অর্ডার কম। তাই পুরোদমে গার্মেন্টস কারখানা চালাতে হচ্ছে না। যদি অর্ডার বেশি থাকত তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো গার্মেন্টস খাত। যেহেতু দেশে সার্বিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এখন রেশনিংয়ের মাধ্যমে কারখানা চালাতে হচ্ছে।’

পিডিবি জানায়, চট্টগ্রামে ভারী ও হালকা শিল্প কারখানার জন্য দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। কিন্তু সব মিলিয়ে দৈনিক প্রায় ৯০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। পিডিবি চট্টগ্রাম জোন বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিদ্যুতের সার্বিক উৎপাদন চাহিদার চেয়ে কম হচ্ছে। যে পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে তা সরবরাহ দিচ্ছি। শিল্পমালিকরা লোডশেডিং নিয়ে যোগাযোগ করছেন। এখন আমাদের করার কিছু নাই। রেশনিং করে কারখানা চালাতে বলেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ঠিক না থাকায় লোডশেডিংয়ের  সিডিউলও ঠিক রাখা যাচ্ছে না।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক দিন যাবৎ লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। দিনের বেলা ছাড়াও রাতের বেলায়ও একাধিক বার লোডশেডিং করা হচ্ছে। রাত ২টা, ৩টা, ৪টার সময়েও লোডশেডিং করা হচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রামে আরো ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। খুবই কম সময় মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।

পিডিবি জানায়, গ্যাসসংকটে রাউজানের বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে ১ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বাকি চার ইউনিটে ১৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। শিকলবাহায় ১৫০ মেগাওয়াট বন্ধ রয়েছে। অপর দুটি ইউনিট থেকে ২৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া সরকারি বেসরকারি ডিজেলচালিত ১৪টি ইউনিট থেকে ১ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে সরকারি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার ৪৮৬ মেগাওয়াট। আর চট্টগ্রামের দৈনিক চাহিদা ১ হাজার ২৮৬ মেগাওয়াট। ফলে চট্টগ্রামে উৎপাদিত বাকি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা জানায়, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে পানি শোধনাগারগুলোতে ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবহার বেড়েছে। ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, আমাদের চারটি পানি শোধনাগার ও তিনটি রিজার্ভার রয়েছে। এছাড়া গভীর নলকূপ রয়েছে। পানির উৎপাদন ঠিক রাখতে ডিজেলচালিত জেনারেটরের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিতরণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। চট্টগ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তিনটি জোন রয়েছে। গ্রামে বিদ্যুতের লোডশেডিং সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. সরয়ার জাহান বলেন, আমাদের দৈনিক চাহিদা ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা থেকে অনেক কম বিদ্যুৎ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। এতে লোডশেডিংও বেড়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মতে বিতরণ ব্যবস্থা চালু রেখেছি।’

ইত্তেফাক/ইআ