শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কিশোরদের টিফিনের টাকায় ‘শিশুদের হাসি পাঠাগার’

আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:৫০

‘সুন্দর জীবনের জন্য বই’ স্লোগানে গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে বইয়ের আলো ছড়াচ্ছে একদল  কিশোরের টিফিনের জমানো টাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘শিশুদের হাসি পাঠাগার’র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রজেক্ট। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই ছাড়াও অন্যান্য বই পড়ে জ্ঞানের পরিধি বিকশিত করতেই তাদের এই উদ্যোগ।

গ্রামের শিশুরা পাঠ্যবই ছাড়া অন্যসব গল্পের বইয়ের সাথে তেমন পরিচিত না। তাদেরকে অন্যসব বই পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে এই প্রজেক্ট। প্রথমে, পাঠাগারের কিশোররা একটি স্কুল বাছাই করে। মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে সেই স্কুলে বই দেওয়া-নেওয়া হয়। স্কুলের যেকোনো শিক্ষার্থী কোনো ফি ছাড়াই একদম বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদেরকে বই দেওয়া হয়। তারা বাসায় বইটি পড়া শেষ হলে ফেরত দিয়ে আবার আরেকটি নতুন বই নেন। শিক্ষার্থীদেরকে পাঠকৃত বইয়ের ওপর রিভিউ দিতে হয়। বই পাঠে উত্সাহিত করার জন্য সেরা রিভিউকারীর জন্য থাকে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এভাবেই চলছে ‘শিশুদের হাসি পাঠাগার’র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কার্যক্রম।

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলগুলোতে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিশুদের হাসি পাঠাগার। তাদের সংগ্রহে থাকা শিশুতোষ, কিশোর উপযোগী, শিশুদের বিজ্ঞান, আরব্যরজনী ও জ্ঞানমূলক বিভিন্ন বই নিয়ে স্কুলগুলোতে হাজির হলে   স্কুুলের শিশুরা আনন্দের সাথে তাদের পছন্দ অনুযায়ী বই বাসায় নিয়ে যায়।

স্কুলভিত্তিক এ কার্যক্রমের সক্রিয় সদস্য শরফুদ্দিন আলম ভান্ডারী বলেন, ‘আমরা শিশুদের জ্ঞান বিকশিত করতে কাজ করছি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভা সবার সামনে তুলে ধরছি।  

হোসেনপুর ধুলজুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিল হাসান জানায়, তার বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়ার অনেক ইচ্ছা, কিন্তু সে কখনো এই সুযোগ পায়নি। এখন সে লাইব্রেরি থেকে বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে পারছে। শিশুদের হাসি পাঠাগার মূলত হোসেনপুর সরকারি মডেল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের একদল শিক্ষার্থীর উদ্যোগে ২০১৮ সালে লাইব্রেরিটি চালু হয়। বর্তমানে তাদের সংগ্রহে বিভিন্ন ধরনের ৭০০’র অধিক বই রয়েছে।

পাঠাগারটির রয়েছে নিজস্ব এপ্লিকেশন, যার মাধ্যমে যে কেউ সদস্য হয়ে বই পড়ার জন্য আবেদন করতে পারে।  শিশুদের হাসি পাঠাগারের সভাপতি মাহমুদুল হক রিয়াদ বলেন, ‘আমরা স্কুলে পড়াকালে কোনো পাবলিক লাইব্রেরি ছিল না; যার ফলে আমরা পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কোনো বই পড়তে পারিনি। সবসময় একটা পাবলিক লাইব্রেরির অভাব বোধ করতাম। এ সময়ের শিশুরা যেন বই পড়তে পারে, বইয়ের সাথে সম্পর্ক করে সুন্দর জীবন গঠন করতে পারে তার জন্যই ‘শিশুদের হাসি পাঠাগার’র কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।’

ইত্তেফাক/এসটিএম