ঢাকা নগর পরিবহনের নামে সরকার রাজধানীতে কিছু নতুন গাড়ি নামিয়েছে। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশে লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন এখনো রয়ে গেছে। এসব যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ উন্নতমানের সেবা পাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
এই পরিস্থিতিতে এসব জীর্ণশীর্ণ গাড়ি বন্ধে শুরু হতে যাচ্ছে ঝটিকা অভিযান। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান শুরু করবে। এ ধরনের জীর্ণদশা এবং রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোর কালো ধোঁয়া রাজধানীসহ শুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে চলাচলের পরিবেশ দূষিত করছে মারাত্মকভাবে। এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে যত্রতত্র যানজট তো প্রতিনিয়তই লেগে থাকছে। এসব যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকার কারণে সরকার, জনসাধারণ উভয়েই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, তা হলো, রাজধানী থেকে পুরোনো যানবাহন উচ্ছেদ করে তা যেন মফস্সল এলাকায় পাঠানো না হয়। কারণ গ্রাম বা মফস্সল এলাকার মানুষও এ দেশেরই নাগরিক। তারা কেন এসব পরিবহনে উঠে জীবন পকেটে নিয়ে চলাচল করবে? একটি যানবাহনের মেয়াদ বা আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে এলে তা ব্যবহার করা নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আমরা দেখি, রাস্তার মাঝখানে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে গেলে যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করছি, কিন্তু পরিবহন সেক্টরে সেই উন্নয়নের ছোঁয়া কোথায়?
লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাস, ট্রাক, মিনিবাস ও মাক্রোবাসগুলো যথাসময়ে রুট পারমিট নবায়ন না করার কারণে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি এসব যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় মানুষ নানা প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যদি লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন অপসারণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশের সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থার মান বহুলাংশে উন্নত হবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি উন্নত শহরে পরিণত করা সম্ভব হবে।
আমরা জানি, দুই যুগের অধিক সময় ধরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন হাজার হাজার পুরোনো যানবাহন চলছে। যানজটে জনগণের চরম দুর্ভোগ এবং জানমালের নিরাপত্তার কথা কেউ ভাবছে না। একশ্রেণির অসাধু লোকের কারণে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বহুবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং লক্কড়ঝক্কড় মার্কা যানবাহন বহালতবিয়তে চলছে। তাদের যোগসাজশে রাজধানী ঢাকাসহ দূরপাল্লার অনেক পরিবহনেও কোনো ধরনের কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও বাতিল চেসিসগুলোতে নতুন বডি বানিয়ে আবার রাস্তায় নামানো হচ্ছে। চাঁদাবাজাদের ম্যানেজ করে বাসগুলো অবৈধ পন্থায় রাস্তায় চলাচল করছে। নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই যুগ ধরেই বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকাকে একটি যানজটমুক্ত শহরে রূপান্তরিত করতে একটি মেঘা প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। কিন্তু দুই যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরও আজ অবধি এ ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের কোনো খবর নেই। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মাঝেমধ্যে উচ্ছদ অভিযান চালালেও তা যেন অনেকটা দায়সারা গোছের। এদিকে রিকন্ডিশন মাইক্রোবাস, কার ও জিপ আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো কোনো পরিবারে চার-পাঁচটি করেও প্রাইভেট গাড়ি রয়েছে। অবশ্য তারা মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স দিয়েই প্রাইভেট কার চালাচ্ছেন। রাজধানীতে গণপরিবহনের তুলনায় কার-মাইক্রোবাসের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় যানজট আর জনদুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করায় সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। সমস্যা একটি নয়, নানাবিধ সমস্যায় জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি।
আদালত ঢাকার প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। উপরন্তু তা বন্ধ করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে মারধর করার ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। আমরা জানি, দীর্ঘ পরিকল্পনায় সরকারের চিন্তাভাবনা ছিল সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালকে রাজধানী ঢাকার বাইরে আপসারণ করা। কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর বাধার কারণে সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। এটা আর কখন সম্ভব হবে? লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাসের সিটগুলো ভালো নয়। ফ্যানগুলো অচল। এমন বাসে আমরা উঠতে চাই না। বাধ্য হয়েই উঠছি। এসব ফিটনেসবিহীন বাসে ব্লু বুকের সঙ্গে আসনসংখ্যার কোনো মিল নেই। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে পরিবহন সেক্টর। আগামী ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ রুট ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) যে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং এই অভিযানের সাফল্য কামনা করি।
লেখক: সাংবাদিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক, শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ বাংলাদেশ