বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অণুভাবনা

পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়

আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ০৪:০১

নিরাপত্তার অভাবে ধীরে ধীরে আমাদের চিরচেনা এই পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত পাখি। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু পাখি :পানকৌড়ি, শালিক, দোয়েল, বুলবুল, বাবুই, ঘুঘু, ডাহুক, বক, কোকিল, টুনটুনি, কালামুখ, দেশি-গাঙচষা, পালাসি, বাংলা শকুন ইত্যাদি। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় প্রজাতি বৈচিত্র্য বেশি। হাওড়-বিল আছে বলে সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলায় পাখি আছে। পদ্মা ও যমুনা নদীর বিরান চর থাকার কারণে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগেও কিছু পাখি দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে চিল, বাজ পাখিগুলো বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে মানুষকে সাহায্য করছে, অন্যদিকে পাখিদেরই একটা অংশ ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফসলকে রক্ষা করছে। একটি ছোট পাখি ঘণ্টায় ১২০০ পোকা ধরে খেতে পারে। এর ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব উপায়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য উত্পাদন সম্ভব হয়। পাখিরা ফসলের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুদেরও অনেক উপকার করে। গৃহপালিত পশুদের লোমে এক ধরনের পোকা বাসা বাঁধে। পাখিরা সেই পোকা খেয়ে তাদের উপকার করে। পাখি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পরাগায়নে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পৃথিবী থেকে পাখি বিপন্ন হওয়ার জন্য মানুষের শৌখিনতাই দায়ী। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তা, শিল্পকারখানা গড়তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাখির আবাসস্থল, এটি পাখি বিলুপ্ত হওয়ার একটি কারণ। মানুষ তার জীবনকে সহজ করতে ব্যবহার করছে বিভিন্ন প্রযুক্তি। প্রযুক্তির বদৌলতে যেসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহূত হচ্ছে, সেসব প্রতি মুহূর্তে রেডিয়েশন নির্গত করছে। ফলে বাস্তুতন্ত্র রক্ষাকারী পাখিদের স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমছে। অতিরিক্ত রেডিয়েশন নির্গত হওয়ার ফলে পাখিদের দেহকোষ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। ইন্টারন্যশনাল অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অ্যানিমেলস-এর মতে অত্যধিক শব্দ পাখিদের জন্য ক্ষতিকর। পাখিদের শ্রবণসীমা অন্য প্রাণীদের তুলনায় অনেক কম হওয়ার কারণে বাজি ফাটানো বা পাখিদের সহ্য সীমার বাইরে উচ্চশব্দ তাদের জন্য ভয়াবহ, মরণমুখী। নির্বিচারে বন-জঙ্গল ধ্বংস করায় পাখিদের অভয়ারণ্য নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ দখলদারিত্বে জলাভূমির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে জলভাগে যেসব পাখি বিচরণ করত, তাদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। পাখি শিকার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ ব্যাপক হারে পাখি শিকার করে তা পাচার করছে। সেজন্যই আশঙ্কাজনক হারে কমছে পাখির সংখ্যা। বর্তমান সময়ে দেশে বিপদাপন্ন পাখি প্রজাতির সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি। দশ প্রজাতির পাখি রয়েছে মহাবিপন্নের তালিকায়। তার মধ্যে অন্যতম একটি পাখি হলো শকুন। পঞ্চাশ বছর আগে এদেশে শকুনের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। বর্তমানে অনেক কম।

পাখিদের এই শোচনীয় অবস্থায় তাদের নিরাপত্তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে, বেআইনিভাবেই পাখি শিকার যা দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল, এক লাখ টাকা দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত। একই অপরাধ ফের করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এই আইনের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে মানুষের উচিত নিজেদের শৌখিনতা বাদ দিয়ে আগামী প্রজন্মকে রঙিন পৃথিবী দেখার সুযোগ করে দেওয়া। এজন্য নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে, পাখিকে খাঁচায় বন্দি না করে মুক্ত করে দিতে হবে, পাখি শিকার ও পাখিকে খাদ্যের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এছাড়াও পাখিদের বিচরণ স্থানগুলো নির্বিচারে দখল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আবাসহারা পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে তাদের বিচরণক্ষেত্রগুলো নিরাপদ করে তোলা। আমরা মানবজাতি প্রকৃতির যত কাছাকাছি যাব তত বেশি চিনতে পারব প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ পাখিকে।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন