বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা বাতিল ও সার্বিক তদন্তে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (লালবাগ) বিভাগ।
তদন্তে ও গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে এমডির কক্ষ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। আরও অনেক ব্লাংকচেক উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি পুলিশ বলছে, বিমান বাংলাদেশ একটি পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন ফাঁস করেছেন জাহিদ নামে এমডির অফিস সহকারী। নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে একটি কমিটি রয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি।
এখানে অনেক লোকের চাকরি হওয়ার কথা। তারা দায় এড়াতে পারেন না। এই ঘটনায় যাদের দায় রয়েছে, প্রশ্ন ফাঁস করেছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে নিয়োগ পরীক্ষার সদস্যদের কাউকে ফোনে কাউকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ।
তিনি বলেন, বিমানে নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এ ঘটনায় ২১ অক্টোবর ডিবি লালবাগ প্রথম দিনই বিমানবন্দর, কাউলা থেকে আওলাদ হোসেন (২১), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), এনামুল হক (২৮), হারুন-অর-রশিদ (৪০) ও মাহফুজুল আলম (৩১) নামে বিমান বাংলাদেশের পাঁচ কর্মচারীকে গ্রেফতার করে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রের সফট কপি, টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্প, মোবাইল নাম্বার, ডায়েরি ও পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এরপর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন, মো. মাসুদ, জাহিদ হাসান, সমাজু ওরফে সোবহান, জাবেদ হোসেন এবং জাকির হোসেন।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত হতে নগদ দেড় লাখ, বিভিন্ন ব্যাংকের (চেক-৩২টি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প-১৭টি, মোবাইল ফোন ১৪টি, মোটরসাইকেল, ডায়েরি তিনটি, ফাঁস হওয়ার প্রশ্নপত্রের হার্ডকপি ও সফটকপি এবং নিয়োগ প্রার্থীদের প্রবেশপত্র ৫৪টি।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে ৯ জন প্রশ্ন ফাঁসে নিজেদের ও অন্যদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা প্রশ্ন ফাঁসের যাবতীয় অপকর্মের বিবরণ দিয়েছেন।
হারুন বলেন, পরীক্ষা কমিটির মূল জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে প্রশ্নপত্র রেডি হয়। সেখান থেকে এক জন প্রশ্নপত্রের ছবি তোলেন। ২০ অক্টোবর বিমানের লোগো মুছে ফেলে ৮০টা প্রশ্ন টিক চিহ্ন দিয়ে আরও দুই জনের কাছে সরবরাহ করে। ঐ দুই জন মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়।
আবার ১৯ অক্টোবরের সামারাইজ প্রশ্নের ফটোকপি এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি স্মার্ট ফোন সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ফটোকপিকালে ছবি তুলে সোবহানের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোবহান আরও কয়েক জনের কাছে সরবরাহ করেন।
গ্রেফতারকৃত কোনো আসামির জবানবন্দিতে এমডির নাম এসেছে কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, যাদের দায় আছে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।