রাজধানীতে বাড়ছেই ডেঙ্গু রোগী। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু রোধে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন। তবে আক্রান্তের হার কমাতে সাধারণ মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম আরো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, লার্ভা ধ্বংসে শুধু প্রচারণা চালালেই হবে না, উড়ন্ত মশা মারার জন্য ফগিং করতে হবে । ডেঙ্গু রোগীর আশপাশে এটি বেশি করে করতে হবে।
স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়। তাই দুই সিটি করপোরেশন লার্ভা ধ্বংসে জনগণকে সচেতনতার কথা বলছেন। বাসা-বাড়ির মধ্যে বা আশপাশে জমে থাকা পানি ফেলে দিতে উদ্বুদ্ধ করছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বলছেন, ডেঙ্গু বিস্তারের এমন পরিস্থিতিতেও অনেক এলাকায় ফগিং করছে না সিটি করপোরেশন। তাদের দাবি, সাধারণ মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনেরও মশা দমনের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে। এভাবে শুধু লার্ভা ধ্বংসের অভিযান ও প্রচারণা করে দায় এড়ানো যাবে না ।
রাজধানীর মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগ এলাকার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা হলেই মশার উৎপাত বেড়ে যায়। আমাদের এই এলাকায় প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন । তার পরেও সিটি করপোরেশন থেকে কোনো মশার ওষুধ দিতে দেখিনি । সাধারণ মানুষ জমা পানি ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনেরও তো ওষুধ ছিটাতে হবে। তা না হলে তো ডেঙ্গু আরো বাড়তেই থাকবে। মিরপুরের কাজীপাড়ায় আরেক বাসিন্দাও জানালেন মশার ওষুধ না ছিটানোর কথা। অন্য দিকে দক্ষিণ সিটির ডেমরার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, আগে সন্ধ্যায় কিছু মশার ওষুধ দেওয়া হতো, এখন ডেঙ্গু বাড়ার কারণে তা আরো বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে আরো কমেছে মশার ওষুধ দেওয়া।
আজিমপুর কলোনি এলাকার বাসিন্দারাও জানিয়েছে নিয়মিত ফগিং করা হচ্ছে না। তবে, মশা মারতে ফগিং না করলেও কিছু এলাকায় লার্ভা ধ্বংসে অভিযান পরিচালনা ও জরিমানা করতে দেখা গেছে বলে জানান কয়েকটি এলাকার মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেছে ১৬১ জন। এর মধ্যে অক্টোবরেই মারা গেছে ৮৬ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪০ হাজার ৯৮৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৭ হাজার ৬৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছে ১৩ হাজার ৩৩৭ জন । সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ৩৭ হাজার ১৪৬ জন। নতুন আক্রান্তসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৩ হাজার ৬৭৬ জন রোগী।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণ মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি দুইভাবে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রথমটি হলো, দেখতে হবে কোন বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সে বাড়ির আশপাশে ফগিং ও লার্ভিসাইডিং করে চার দিকের মশা মেরে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়টি হলো, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে হবে । কারণ যে মশা ডেঙ্গু রোগীকে কামড়াবে সেটি আরেকজনকে কামড়ালে আবার তারও ডেঙ্গু হবে । তাই এডিস মশাগুলো যেন জীবাণু ছড়িয়ে দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের লার্ভা ধ্বংসে স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বাসাবাড়িতে জমা পানি ফেলে দেওয়ার বিষয়ে জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে। এছাড়া কেউ যদি এলাকাভিত্তিক ব্যক্তি উদ্যেগে স্প্রে ও ফগার মেশিন কিনে তাহলে আমরা তাদের মশার ওষুধ দেব। আমরা চাই আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের সঙ্গে সাধারণ মানুষও সংযুক্ত হোক। অন্য দিকে দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকতা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘আমাদের দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আছে। সারা দেশের তুলনায় দক্ষিণে ডেঙ্গু রোগী কম । ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত লার্ভা ধ্বংসে স্প্রে ও ফগিং করে যাচ্ছি।'