রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ডেঙ্গু প্রতিরোধ

দুই সিটি কর্পোরেশনের বাড়তি উদ্যোগ নেই

রাজধানীতে লার্ভার ঘনত্ব মারাত্মকভাবে বেড়েছে

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ০৬:০০

এডিস মশার উপদ্রব বাড়ছে। এর কামড়ে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে। দ্রুতই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অন্যদিকে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশনের বাড়তি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ার শঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, এবার মশার বংশবৃদ্ধির হার মারাত্মক। অচিরেই মশা দমনে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।

জানা যায়, রাজধানীতে বাড়ি বাড়ি এডিস মশার সন্ধানে অনুসন্ধান চালায় একদল গবেষক। এই জরিপের নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার। ঈদুল আজহার ছুটির আগের দুই সপ্তাহ ধরে চলা জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে সাত থেকে আটটি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা বা শূককীট পাওয়া গেছে।  লার্ভা জরিপে যে বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটি হলো লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করা। এ ক্ষেত্রে স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। যদি এই ইনডেক্সের পরিমাণ ২০-এর বেশি হয়, তবে তা আশঙ্কাজনক বলে বিবেচিত হয়। এখন এই জরিপ অনুযায়ী, ব্রুটো ইনডেক্সের হার ৫০ থেকে ৬০।

এ বিষয়ে কবিরুল বাশার বলেন, এবার এডিস মশার বংশবৃদ্ধির হার মারাত্মক। মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত যতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, এর সংখ্যা গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু বৃদ্ধির ‘আদর্শ’ পরিস্থিতি রয়েছে। কারণ হিসেবে আবহাওয়া পরিস্থিতি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতার অভাব এবং সর্বোপরি সরকারের প্রস্তুতির অভাবকে তুলে ধরছেন ।

গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৯ জন। চলতি বছর এখনো পর্যন্ত এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির সংখ্যা। গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানা যায়।

মিরপুরের বাসিন্দা তাওসীফ আলম বলেন, সন্ধ্যা হলে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। এমনিতেই তীব্র গরম, তার ওপর দরজা-জানালা বন্ধ করলে যেন সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এত কিছুর পরেও মশা থেকে রক্ষা নাই।

মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা রায়হান বলেন, বাইরে এসে একটা জায়গায় বসা যায় না, দাঁড়ানো যায় না। ঘরের ভেতরে সন্ধ্যার পর থেকে কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। তবু মশা দূর হয় না, অতিরিক্ত মশা বাড়ছে।

মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর শত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস আসে। এরপরও মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।

বরাবরের মতো এবারও নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এডিস মশার বিস্তার রোধে তাৎক্ষণিক ফলাফল পেতে দৈনিক দ্বিগুণ হারে কীটনাশক ছিটানোর কথা জানানো হয়েছে। ১৪ জুন থেকে ডিএসসিসি এলাকায় দৈনিক এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রমে (ফগার মেশিন ব্যবহার করে) বর্তমানের বরাদ্দ ৩০ লিটারের পরিবর্তে ৬০ লিটার কীটনাশক ব্যবহার করছে। এছাড়া মশককর্মীদের সকাল ও বিকালের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং কীটনাশক সঠিক অনুপাতে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত যাচাই করছে সংস্থাটি। এর বাইরে জনসচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এডিস মশার বিস্তার রোধে আমরা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

অপরদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা তৈরিতে মনোযোগী হয়েছে। হ্যান্ড-মাইক ও মেগাফোনের মাধ্যমে বার্তা প্রচারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। এজন্য ছয় সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়।  নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাতৃসদনে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। 

ডেঙ্গু বিষয়ে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, মশকনিধন কর্মীদের কাজের গতি বাড়াতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বিল সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট বন্ধ হয়। তবে দায়িত্বে অবহেলা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির চুক্তিও বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, খাল পরিষ্কারসহ মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ডিএনসিসি।

ইত্তেফাক/এমএএম