মিশরীয় শহর শারম-আল-শেখে জাতিসংঘের উদ্যোগে ২৭তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ–২৭ বা কনফারেন্স অব পার্টিজ-২৭) শুরু হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধি এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বের ব্যবস্থা নেওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে রোববার (৬ নভেম্বর) শুরু হয় এ সম্মেলন। যা চলবে আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ প্রভাব মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হওয়াই কেবল নয় বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্ররিদ্র দেশগুলো এরমধ্যে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আর্থিক সহায়তা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে আলোচনার সম্মতির মধ্য দিয়ে এবারের সম্মেলন শুরু হয়।
কয়েক দশক আগে জলবায়ু নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথমবারের মতো আলোচ্য সূচীতে বিতর্কিত এই বিষয়টি রাখা হয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধনী দেশগুলো জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র দেশগুলোর ভূমিকা কম হলেও এর ফল প্রধানত তাদেরই ভোগ করতে হচ্ছে। এসব ক্ষতি মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে তহবিল দেওয়ার কথা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর।
২০২১ সালে ব্রিটেনের গ্লাসগোতে 'কপ-২৬' এ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ধনী দেশগুলো ক্ষয়ক্ষতির অর্থায়ন বিষয়ক একটি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব আটকে দেয়। এর পরিবর্তে তিন বছর মেয়াদি তহবিল আলোচনার একটি প্রস্তাবে সমর্থন জানান তারা।
এবারের সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতির তহবিলসহ জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ছাড়াও দুই সপ্তাহ ধরে ওয়ার্কশপ, প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মতো আরও অনেক অনুষ্ঠান হবে।
এবারের সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে থাকছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, জার্মানির ওলাফ শলৎস, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোয়ান। উরসুলা ফন ডার লায়িন এ সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন শেষ হওয়ার পর শুক্রবার (১১ নভেম্বর) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্মেলনে উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি জন কেরি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এরআগে মিশরে যাচ্ছেন না বলে জানালেও গত সপ্তাহে তিনি সম্মেলনে যাচ্ছেন বলে জানান। ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া লুয়িজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্ব নেতাদের মধ্যে মিশরের সম্মেলনে যারা উপস্থিত থাকবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে তাদের অন্যতম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও এবারের সম্মেলনে তিনিও যাচ্ছেন না।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, জলবায়ু আন্দোলনের উজ্জ্বল তরুণ মুখ গ্রেটা থুনবার্গও শারম-আল-শেখে যাচ্ছেন না।