বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘এখন আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না’

সিডরে তালায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন যাপন

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৫

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর  প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদ। ১৫ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘূর্ণিঝড়ে  সাতক্ষীরার তালায় সাত জন লোক নিহত হন।  আহত হয় শতাধিক লোক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হতাহতের পরিবারগুলোর অনেকেই এখনও খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে দিন পার করতে হচ্ছে।  অনেকেই আবার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

সিডরে নিহত তালা সদরের মালোপাড়া অজিত হালদারের স্ত্রী রিতা হালদার বলেন, এই দিনে সিডর তার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অজিত হালদারকে কেড়ে নেয়। ওই সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে নগদ টাকা এবং সাহায্য পেলেও এখন কেউ তাদের খোঁজ-খবর নেয় না।

তিনি বলেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাছ বিক্রির পাশাপাশি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছি। একমাত্র মেয়ে সুপ্রিয়া হালদারকে কোনো মতে পাত্রস্থ করলেও সংসার চালাতে সেও স্বামীর সঙ্গে দিন মজুরের কাজ করে। বড় ছেলে কলেজে পড়ুয়া বিপ্লব হালদারের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রায় ১৫ বছরের শিশুপুত্র কৃষ্ণ হালদারকে টাকার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সে বর্তমানে ৭ম শ্রেণির ছাত্র। এছাড়া আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ২০ হাজার টাকা ঋণের বোঝার পাশাপাশি বর্তমানে চারটা এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না !

সিডরে নিহত একই গ্রামের গৌর হালদারের স্ত্রী আরতি হালদার জানান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁর স্বামীর প্রায় ২ লক্ষ টাকা ধার-দেনা শোধ করার জন্য আমার তিন ছেলে আবারও সাগরে মাছ ধরতে গেছে। বর্তমানে তাদের সংসার চালানো খুবই দুরুহ হয়ে পড়েছে। ঐ সময় অনেক সহায়তা পেলেও বর্তমানে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না বলে তিনি জানান।

সিডরে নিহত উপজেলার বাউখোলা গ্রামের গোবিন্দ বিশ্বাসের স্ত্রী আরতি বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর স্বামীকে কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি আমার সংসারও তছনছ করে দিয়েছে। তাছাড়া মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া লক্ষাধিক টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। আমরা সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছি।

একই অবস্থা নিহত অন্যান্য পরিবারগুলোতে। কিছু পরিবার সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ এবং ভাতার কার্ড পেলেও অনেকের ভাগ্যে তাও জোটেনি। সব মিলিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নিদারুন কষ্ট ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারগুলো। 

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে অসহায় পরিবারগুলোকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।

ইত্তেফাক/আরএজে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন