শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ

মোট নির্যাতনের শিকার নারীর ৮৩ শতাংশ যৌতুকের কারণে

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০০

করোনার সময় নারীর প্রতি পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, মহিলা পরিষদ ২০২১ সালে বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন নিয়ে করা এক জরিপে দেখেছে মোট নির্যাতনের শিকার নারীর ৮৩ শতাংশই যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হন।

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

এমন বাস্তবতায় ‘সবার মাঝে ঐক্য গড়ি, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করি’ প্রতিপাদ্যে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। একই সঙ্গে আজ থেকে পক্ষকালব্যাপী পালিত হবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ।

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসাবে, ২০১৯ সালে ৪২৩টি পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৪টি। ২০১৯ সালে নির্যাতনে মৃত্যু ৩৬৭ জনের, আর আত্মহত্যা করেন ৯০ জন নারী। ২০২০ সালে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ৮৯ জনকে। আত্মহত্যা করেন ১৮ জন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৭৫ জন নারীকে তাদের স্বামী হত্যা করেন।  ৯২টি মামলা হয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, এখনো মানুষ পারিবারিক সহিংসতাকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করে। সমাজ ও নারীও তা মেনে নেয়। নির্যাতনের প্রতিকারের জন্য আইনি সাহায্য নেন না। কোভিডের পরে যৌতুকের ঘটনাও বেড়েছে। মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন ২ হাজার ৩৬ জন নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন ৯২ জন। যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয় ৪২ জন নারীকে।

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

মানবাধিকার কর্মী নারী পক্ষের সদস্য শিরীন হক বলেন, করোনা একটা উপলক্ষ। করোনা না হলে অন্য কোনো কারণেও পারিবারিক নির্যাতন বাড়তো। নির্যাতনের জন্য দায়ী হাজার বছরের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। শুধু শাস্তি দিয়ে নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের সুরক্ষায় আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। দৈনিক সংঘটিত নারী নির্যাতনের ঘটনার ওপর নিয়মিতভাবে তদন্ত ও ফলোআপ করা হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা কার্যালয় এবং বিভাগীয় আইনি সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে এ ফলোআপ করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার নগদ প্রণোদনা ঘোষণা ও বরাদ্দ করা হয়েছে। জয়িতা ফাউন্ডেশন নারী উদ্যোক্তাদের ৫০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের বাল্য বিবাহ রোধ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)

এদিকে, গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস ও পক্ষ পালন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে মহিলা পরিষদ। মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের কর্মসূচি উপস্থাপন করেন লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। ‘নারী ও কন্যার প্রতি যৌন সহিংসতা (ধর্ষণ) ও তরুণ প্রজন্মের সম্পৃক্ততা’ বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অপরাধবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান।

এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম এবং অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইত্তেফাক/এমএএম