ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর বহু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। যা তাদের সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। এরই মধ্যে জানা গেল, নিষেধাজ্ঞার ভারে জর্জরিত রাশিয়া ভারতের কাছে পণ্য চেয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতকে ৫০০টির বেশি পণ্যের তালিকা পাঠিয়েছে রাশিয়া। এই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে গাড়ি, বিমান ও ট্রেনের যন্ত্রাংশ। সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে এসব সেবা চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার পাঠানো তালিকা তারা দেখেছে। তালিকায় যেসব পণ্যের চাহিদা দেওয়া হয়েছে সেগুলো সব পাঠানো যাবে কিনা বা পরিমাণ কেমন হবে সেটি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
ভারতীয় সরকারি একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে এমন চিঠি পাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। কিন্তু ভারত এ ধরনের বাণিজ্যে আগ্রহী। তারা রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতেও কাজ করছে। তবে কিছু কোম্পানি মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা করতে দ্বিধাবোধ করছে। কারণ তাদের ভয়, হয়ত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার নিয়ম-নীতি ভাঙার কবলে পড়ে যেতে পারে তারা।
রাশিয়ার একটি সূত্র নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছে, দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বড় কোম্পানিগুলোকে তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের প্রকার ও পরিমাণ তালিকাভুক্ত করতে বলেছে।
এদিকে এ তালিকার ব্যাপারে মন্তব্য নিতে রাশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। কিন্তু তাদের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
গত ৭ নভেম্বর রাশিয়া সফরে যান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। কয়েক সপ্তাহ পরে রাশিয়া এই তালিকা পাঠিয়েছে। জয়শঙ্করের মস্কো সফরে এ নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে তাও নিশ্চিত নয়।
তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চান তারা। ওই সফরে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরূপ প্রভাব পড়েছে রাশিয়ার ওপর। বিশেষ করে তাদের এভিয়েশন সেক্টর সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে। যেহেতু বেশিরভাগ বিমান অন্য দেশে তৈরি। ফলে মস্কো এখন তাদের যন্ত্রাংশ পাচ্ছে না।
এছাড়া গাড়ির যন্ত্রাংশের সংকটেও আছে তারা। কারণ ইউক্রেনে হামলার পর বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।
ভারতের কাছে যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেটি ১৪ পাতার। এতে গাড়ির ইঞ্জিনের পিস্টন, তেলের পাম্প ও ইগনিশন কয়েলের মতো অংশ রয়েছে। এছাড়া বাম্পার, সিটবেল্টও রয়েছে।
অন্যদিকে তারা হেলিকপ্টার ও বিমানের ৪১টি ছোট-বড় যন্ত্রাংশও তালিকাভুক্ত করেছে। এছাড়া কাগজ তৈরির কাঁচামালও চায় রাশিয়া।