মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দুরন্ত বিপ্লবের অকালমৃত্যু

আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৩০

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায়বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দুরন্ত বিপ্লবের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। হঠাৎ তার মৃত্যুর খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগল। এভাবে তাকে চলে যেতে হলো। কী-বা এমন বয়স তার হয়েছিল। কেউ বলছেন তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ বলছেন, তিনি যে নৌকায় যাচ্ছিলেন, সেটি লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল। তিনি ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানান। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ধারণা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক। তাকে আমরা এভাবে হারাব ভাবতে পারিনি। খুবই মেধাবী এবং ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন তিনি। খুবই ভালো কাজ করতেন, এরকম মেধাবী ছেলে আমি খুব কমই দেখেছি। কাজের সূত্রেই তার সঙ্গে আমার একটা পরিচিতি ছিল।

২০১৯ সালে ৫ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশ নামকরণ দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি ‘বাংলাদেশ নামকরণ ও বঙ্গবন্ধুর অনন্য অবদান’ শীর্ষক একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে। সেখানে দুরন্ত বিপ্লব কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই প্রোগ্রামে আমি বিশেষ অতিথি হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ভাবনা’। এর কিছু অংশ এখানে দেওয়া হলো : ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। শহিদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভা। শোনা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, বাতাসে অনুরণিত হচ্ছিল ইতিহাস সৃষ্টিকারী একটি শব্দ ‘বাংলাদেশ’। বললেন, “জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি, আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে শুধু ‘বাংলাদেশ’।” সে সময় অনেকেই হয়তো উপলব্ধি করতে পারেননি, এটি হতে যাচ্ছে হাজার বছরের নিষ্পেষণ শৃঙ্খলমুক্তকারী দেশের আক্ষরিক নাম।

আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ নিয়ে পর্যালোচনা করলে যদিও শাব্দিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুটি আলাদা মনে হয়; কিন্তু ইতিহাসের পরিক্রমা সেগুলোকে অভিন্ন হতে দেয় না। এ কারণে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, বাংলার মানুষ স্বাধীনতাকে ও বঙ্গবন্ধুকে ভিন্ন দৃষ্টিতে কল্পনা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শুধু্ একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্বই দেননি, দিয়েছিলেন এর দর্শন ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপকল্প। প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের ভিত্তি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খুবই সুন্দর একটি প্রোগ্রাম ছিল সেটি। দুরন্ত বিপ্লব স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়ে সব সময় কাজ করে গেছেন। সেই প্রোগ্রাম থেকে আসার পর তিনি আমাকে একটি সুন্দর উপহার পাঠিয়েছিলেন। সেই উপহারের ছবিটি নিচে দেওয়া হলো। আমি আমার অফিসের দেওয়ালে লাগিয়ে রেখেছি। তার অকালমৃত্যুতে আমরা একজন মেধাবী মানুষকে হারালাম। তিনি বেঁচে থাকলে জাতিকে আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দিতেন। এটি খুবই আশ্চর্যজনক ঘটনা যে, তার মৃত্যুকে ঘিরে কোনো পরিষ্কার কথা জানা যাচ্ছে না। আমরা দেশবাসী চাই, তার অকালমৃত্যুর ওপর সঠিক তদন্তসংবলিত পরিষ্কার উত্তর।

লেখক: লেখক ও গবেষক

ইত্তেফাক/এমএএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন