দেশের অন্যতম বড় স্থল বন্দরের গুরুত্ব দিন দিন বাড়লেও অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। রয়ে গেছে পুরোনো দিনের কার্যব্যবস্থা। বন্দরকে করা হয়নি আধুনিকায়ন। দিন দিন নানা সমস্যা বাড়ছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য রাখার সেডগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেড় যুগ আগের পুরাতন ও জরাজীর্ণ সেড ও ইয়ার্ড দিয়ে চলছে কার্যক্রম। বন্দরে আমদানিকৃত মালামাল লোড-আনলোডর জন্য ভাড়া করা অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট নষ্ট থাকায় বিঘ্ন ঘটছে বন্দরের মালামাল খালাসের প্রক্রিয়া। লোড-আনলোডের যান্ত্রিক সমস্যায় এ বন্দরটিতে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ পণ্যজট। ড্রেন ব্যবস্থা থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে সেগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় একটু বৃষ্টি হলে বন্দরের ভেতর হাঁটু পানি জমে যায়। অনেক সময় পানি সেডের ভেতর ঢুকে আমদানি পণ্য ভিজে নষ্ট হয়। আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা। নতুন সেড নির্মাণের জন্য টেন্ডার হলেও একটি মাত্র সেড ছাড়া অন্যগুলোর এখনো নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
এই বন্দরে ভারত থেকে আমদানি মালামাল রাখার জন্য ৩৬টি সেড রয়েছে। যার অধিকাংশেরই মেয়াদকাল অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওপেন ইয়ার্ড পাঁচটি, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড একটি, ট্রাক টার্মিনাল আমদানি দুটি ও রপ্তানি একটি। এসব গুদামে পণ্য ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার টন। কিন্তু সব সময়ই বন্দরে ৭০-৮০ হাজার টন পণ্য মজুত থাকে। ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মালামাল ঝুঁকি নিয়ে রাখা হচ্ছে। এমনকি ট্রাক টার্মিনালসহ বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ রাখার গোডাউনেও রাখা হচ্ছে অন্য মালামাল। জায়গা সংকটে প্রতিদিন কয়েক শ ভারতীয় ট্রাক মালামাল নিয়ে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে খালাশের অপেক্ষায়। বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে ট্রাক ড্রাইভারদের থাকাখাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ড্রাইভার- হেলপাররা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এদিকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি গতি বাড়াতে বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক ইন্টিগেটর চেকপোস্ট। সেখানে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার ট্রাক রাখার ব্যবস্থাসহ সব সুবিধা থাকলেও বেনাপোল বন্দরে সে ধরনের কোনো অবকাঠামো নেই। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের আমদানি ও রপ্তানি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, ‘বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেড় যুগ আগের সেড ও ইয়ার্ড দিয়ে কাজ চলছে।’
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বার বার বন্দর উন্নয়নের ব্যাপারে বললেও বন্দরের চেয়ারম্যান কোনো কর্ণপাত করছেন না। অথচ বেনাপোল বন্দর থেকে প্রতি বছর সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আধুনিক চেকপোস্ট নির্মাণ করলেও বেনাপোল বন্দরকে করা হয়নি আধুনিকায়ন। জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল রাখার জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামসহ ১৫টি সেড নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দুটি এক্সপোর্ট সেড ও একটি ছাউনিযুক্ত ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড নির্মাণের দাবিও করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা না হলে মুখ থুবড়ে পড়বে বাণিজ্য।’
বেনাপোল স্থল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জানান, সাসেক্সের আওতায় বেনাপোল বন্দরে ১০০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে নতুন দুটি শেড, ফ্লোর পাকা করণসহ ড্রেন নির্মাণ করা হবে। সাময়িক কিছু সমস্যা আছে। কাজ শেষ হলে বন্দরে কোনো সমস্যা থাকবে না। বন্দরে পণ্যজটও কমে যাবে বলে আশা করছি।