বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

৫ শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন

নাব্য সংকট বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে নৌ চলাচল ব্যাহত

আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:২৮

শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি নৌবন্দর অস্বাভাবিক হারে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে ডুবচর জেগে উঠেছে। এতে করে বন্দরের নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া পণ্যবাহী বন্দরে কর্মরত প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা বাঘাবাড়ি নৌবন্দর-চট্টগ্রাম ও মঙ্গলা নৌ-বন্দর রুটের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বড়াল নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি অস্বাভাবিক হারে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে ডুবচর জেগে উঠেছে। ফলে চট্টগ্রাম ও মংলা নৌ-বন্দর থেকে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরগামী রাসায়নিক সার, কয়লা, পাথর, সিমেন্ট ও জ্বালানি তেলবাহী কার্গো-জাহাজ পূর্ণ লোড নিয়ে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে যেতে পারছে না। ফলে পাটুরিয়া ও নগরবাড়ির আগেই লাইটারেজের মাধ্যমে জাহাজ থেকে অর্ধেক মাল আনলোড করে বেড়া, নগরবাড়ি ও যশোরের নওয়াপাড়া ঘাটে খালাস করছে। এতে জাহাজ শূন্য হয়ে বন্দর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।

এদিকে, নগরবাড়ি, বেড়া ও যশোরের নওয়াপাড়ায় থেকে ১০ চাকা অথবা ১৬ চাকার ট্রাকে করে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের বাফার গুদামে সার এনে এরপর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে করে মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের চরাচিথুলিয়া গ্রামের কৃষক সোহেল মোল্লাসহ এলাকার কৃষকরা বলেন, সঠিক সময়ে সার মজুদ না হলে উত্তরাঞ্চলে রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এতে আসন্ন ইরি-বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় আমরা শঙ্কিত। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরেও বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে এভাবে জাহাজ শূন্য হয়নি। ডুবচর ও নাব্য সংকটের কারণে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ না আসায় তাদের ৫ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।

অপরদিকে, ১৫ দিন পর বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে একটি সারবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে এলে শ্রমিকরা কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে কিছু সময়ের জন্য বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। এক ঘণ্টা পর কাজ শেষ হলে বন্দরটি আবার অচল হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন কার্যালয়ের পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, চর নাকালিয়া, পেচাকোলা, মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, পাটুরিয়া, নিকলি এলাকায় নদীর পানির নাব্য কমে যাওয়ায় অনেক ডুবচর জেগে উঠেছে। ফলে পূর্ণ লোডে পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর জাহাজ শূন্য হয়ে অচল হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, এ সব চরে আটকাপড়া জাহাজে প্রতিনিয়ত ডাকাতি হচ্ছে। তাই কেউ প্রাণভয়ে জাহাজ এদিকে আনতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে তারা মাঝ পথে পণ্য খালাস করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি এ সমস্য সমাধানে দ্রুত নৌ ড্রেজিং করতে বিআইডব্লিউটিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দর লেবার এজেন্ট আবুল সরকার বলেন, কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাঘাবাড়ি ঘাট ইজারা নিয়েছি। জাহাজ না আসায় আমাদের প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের নৌ পথে কোনো নাব্য সংকট নেই। এখানে ১০ ফুট পানির ড্রাফট রয়েছে।

তিনি বলেন, এটা দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দর। ফলে এ বন্দর চ্যানেলে নিয়ম অনুযায়ী ৮ ফুট ড্রাফটের জাহাজ চলার কথা। নিয়ম অমান্য করে সেখানে ১২ ফুট ড্রাফটের জাহাজ নিয়ে গেলে তো সমস্যা হবেই। এছাড়া বন্দরটি প্রথম শ্রেণির বন্দরে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। এটি হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের বাফার গুদামের ইনচার্জ হারুন আর রশিদ বলেন, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে জাহাজ না এলেও বাঘাবাড়িসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে ইরি-বোরো আবাদের জন্য আপদকালীন সার মজুদের কাজ চলছে। ট্রাকযোগে সার পরিবহণ করা হচ্ছে। ফলে আসন্ন সেচ মৌসুমে সার শঙ্কটের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ নিয়ে কৃষকদের আতঙ্ক না হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।

ইত্তেফাক/আরএজে