দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কমান্ডারের সহকারী হিসেবে কাজ করা ইরমগার্ড ফুরচনাকে ১০ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুরচনারের বয়স এখন ৯৭ বছর। কিশোর বয়সে তিনি টাইপিস্ট হিসেবে স্টুথফ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যান এবং সেখানে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত কাজ করেন।
নাৎসি বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার হওয়া কয়েকজন নারীর মধ্যে ফুরচনার অন্যতম। বিচারে তাকে দুই বছরের স্থগিত কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
যদিও ফুরচনার ক্যাম্পের একজন বেসামরিক কর্মী ছিলেন। কিন্তু বিচারক অভিমত ব্যক্ত করেন, তিনি বন্দী শিবিরে কী ঘটছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন।
স্টুথফ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে প্রায় ৬৫ হাজার বন্দিকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে ছিল ইহুদি, পোল্যান্ডের অ-ইহুদি বাসিন্দা এবং বন্দী সোভিয়েত সেনারা। যেহেতু ফুরচনার তখন ১৮ বা ১৯ বছর বয়সী, তাই তাকে কিশোর আদালতে বিচার করা হয়েছিল।
স্টুথফ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল বর্তমান পোল্যান্ডের গডানস্কে। যেখানে বন্দীদের বিভিন্নভাবে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ১৯৪৪ সালের জুন মাসে কয়েক হাজার মানুষ গ্যাস চেম্বারে নিহত হয়েছিলেন।
জার্মানির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য শ্লেসউইগ-হলস্টেইনের ইটজেহো জেলা আদালতে ফুরচনারের বিচার হয়। সেই সময়ে বন্দী শিবিরে বেঁচে থাকা কয়েকজন ফুরচনারের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন অবশ্য বিচার চলাকালীন মারা গেছেন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ফুরচনারের বিচার শুরু হলে, তিনি জার্মানিতে তার নার্সিংহোম থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাকে হামবুর্গের একটি রাস্তায় আটক করে। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফুরচনার শ্লেসউইগ-হলস্টেইন প্রদেশে চলে আসেন এবং একজন টাইপিস্ট হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
ফুরচনার বিচার শুরু হওয়ার পর ৪০ দিন আদালতে সম্পূর্ণ নীরব ছিলেন তিনি। তার আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন, নীরব থাকা তার মক্কেলের অধিকার।
শেষ পর্যন্ত ফুর্চনার নীরবতা ভাঙেন এবং আদালতে বলেন, 'যা ঘটেছে তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি সেই সময়ে স্টুথফে থাকার জন্য দুঃখিত। আমার এতটুকুই বলার ছিল।'
স্টুথফ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প কমান্ডার পল ওয়ার্নার হোপকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ১৯৫৫ সালে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। পাঁচ বছর কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান।