বার্লিন জানিয়েছে, জার্মানির বায়োএনটেক তার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের একটি চালান চীনে পাঠিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিদেশে তৈরি করোনা ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন চীনে যাচ্ছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র বুধবার (২১ ডিসেম্বর) জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে। তবে চালানটি কবে পাঠানো হয়েছিল এবং এতে কী পরিমাণ ভ্যাকসিন রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
তিনি জানান, বার্লিন চীনে বসবাসকারী অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও টিকা দেবে যদি তারা বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে চায়। গত মাসে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শাল্টজ বেইজিং সফর করেন। বায়োএনটেকের সিইও উগুর শাহিন এই সফরে তার সঙ্গে ছিলেন।
তারা সেখানে চীনে তাদের কোভিড ভ্যাকসিন সরবরাহ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রস্তাব পাওয়ার পর, চীন সরকার দেশে বসবাসকারী জার্মান নাগরিকদের জন্য বায়োএনটেকের টিকা গ্রহণ করতে সম্মত হয়।
এরই অংশ হিসেবে ভ্যাকসিনের প্রথম চালান চলে গেছে। বর্তমানে চীনে প্রায় ২০ হাজার জার্মান নাগরিক বসবাস করছে। শুধু নিজের নাগরিকদের জন্যই নয়, জার্মান সরকার চীনের নাগরিকদেরও বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
বার্লিনের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি, বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের একটি চালান চীনে যাচ্ছে। আমরা বায়োএনটেকের মাধ্যমে জার্মানদের পাশাপাশি অন্যান্য বিদেশী নাগরিকদেরও টিকা দেওয়া সম্ভব করার জন্য কাজ করছি।'
মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইউরোপে চীনের নাগরিকদের সিনোভাক টিকা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এই মাসের শুরুতে জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রক চীনে তৈরি কোভিড ভ্যাকসিন সিনোভাক দেশে আমদানি করার অনুমতি দেয়। যাতে জার্মানিতে বসবাসকারী চীনের নাগরিকরা ভ্যাকসিন পেতে পারেন।
তখনই বেইজিং বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন চীনে পাঠানোর অনুমতি দেয়। এটা কতটা মানসম্পন্ন তা নিয়ে সন্দেহ থাকায়, ইউরোপীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সেখানে চীনের তৈরি সিনোভাক ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
চীন সরকার এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র তার নিজস্ব কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সেই দেশে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। যেগুলো পশ্চিমা এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি হয় না।
কোভিড ভ্যাকসিন 'এমআরএনএ' প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ। বর্তমানে বিশ্বে করোনা ভাইরাসের যে সমস্ত স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়ছে সেগুলো হল ওমিক্রন স্ট্রেন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিনগুলো বিশেষভাবে ওমিক্রন টাইপকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। চীনে তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনের চেয়ে এটি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার বর্তমানে খুব দ্রুত বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তারা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
১৪০ কোটি মানুষের দেশ চীনে অপর্যাপ্ত টিকাদান ও সংক্রমণের বড় ঢেউ সামাল দিতে দেশটির স্বাস্থ্যখাত কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে শঙ্কিত বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে কোভিড-১৯ এ দেশটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। সেখানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা চীনকে সংকট প্রশমনে সাহায্য করতে আগ্রহী। তারা সাহায্য করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।