চীনে করোনার নতুন প্রজাতির ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পাসপোর্টধারী যাত্রীরা করোনা টিকার সনদ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করছেন। এছাড়া আমদানি পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাকচালকেরা অবাধে দেশে আসছেন। তবে দেশের অন্য দুটি ব্যস্ত স্থলবন্দর বেনাপোল ও আখাউড়ায় যাত্রীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, বিএফ-৭ নামে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট চীনে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের গুজরাট ও ওডিশায় চার জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে যাতে এই ভাইরাস ছড়াতে বা আসতে না পারে, সেজন্য গত রবিবার ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে নতুন করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু গতকাল সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত হিলি ইমিগ্রেশন ও স্থলবন্দরে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের করোনা টিকার সনদ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে যাওয়ার অনুমতিসহ মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছে।
ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আসার সময় হিলি ইমিগ্রেশনে কোনো মেডিক্যাল টিম দেখতে পাইনি। আমাকেও কেউ এ ব্যাপারে কোনো কিছু জিগ্যেস করেনি।’ এ ব্যাপারে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘করোনার নতুন ভাইরাসের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমরা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করছি এবং করোনা টিকার দ্বিতীয় সনদ ছাড়া কাউকে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। এই নিয়ম আগে থেকেই এখানে বলবত্ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার জানান, আমি দিনাজপুরে মিটিংয়ে আছি। আজ সকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে ছয় জন সাংবাদিককে বক্তব্য দিয়েছি। ডাক্তারদের তো আরো কাজ আছে নাকি? উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আপনারা এত অস্থির হচ্ছেন কেন? অস্থির হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।’
আখাউড়ায় (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সোমবার সকাল থেকে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সন্দেহভাজন যাত্রীর র?্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত চার জন ভারতীয় নাগরিকের র?্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হয়। তবে এই চার জনের রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে।
হেলথ স্ক্রিনিং বুথের কর্তব্যরত চিকিত্সক ও আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. জহির উদ্দিন জানান, ভারত থেকে আগত সব যাত্রীর স্বাস্থ্যগত তথ্যগুলো নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। যদি কেউ পজিটিভ হন, তাহলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ভারতফেরত যাত্রীদের গতিবিধি লক্ষসহ এন্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এক জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ তিন জন স্বাস্থ্য সহকারী চেকপোস্টে কাজ করছেন। আধুনিক থার্মাল স্ক্যানারে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যশোরের শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউছুপ আলম জানান, বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আইসোলেশন। কোনো পজেটিভ রোগী পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।