বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভারতের ওড়িশাতে পুতিনের সমালোচক রুশ এমপি-র রহস্যময় মৃত্যু

আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০৩

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশার ছোট শহর রায়গড়াতে রাশিয়ার একজন এমপির রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছে, যিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক বলে পরিচিত ছিলেন।  

ভারত সরকার এই ঘটনা নিয়ে এখনও মুখ না খুললেও ৬৫ বছর বয়সী পাভেল আন্তোভের মৃত্যুকে স্থানীয় পুলিশ আত্মহত্যা বলেই দাবি করেছে।  

দিল্লিতে রাশিয়ার দূতাবাসও আজ এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের জানা মতে রায়গড়াতে মি আন্তোভসহ আরও একজন রুশ নাগরিকের মৃত্যুর সঙ্গে কোনো অপরাধের সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

তবে রাশিয়ার ভেতরে ও বাইরে সরকারের বহু সমালোচক এর আগে রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন, আন্তোভের মৃত্যুকে ঘিরেও ইতোমধ্যে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। 

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের রায়গড়া দেশের টুরিস্ট সার্কিটে মোটেই কোনও পরিচিত নাম নয়, কিন্তু সেখানকারই হোটেল সাই ইন্টারন্যাশনালে গত বুধবার (২১ ডিসেম্বর) চেক ইন করে চারজন রুশ পর্যটকের একটি দল, সঙ্গে ছিলেন তাদের ভারতীয় গাইড জিতেন্দ্র সিং।  

চারজন বিদেশির ওই দলে ছিলেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির ওব্লাস্ট অঞ্চল থেকে আইনসভার একজন সদস্য ও ধনকুবের ব্যবসায়ী পাভেল আন্তোভ। আন্তোভ কিছুদিন আগেই রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের তীব্র সমালোচনা করে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন, যা পরে তিনি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন।  

এদিকে চেক ইন করার পর দিনই ওই দলের একজন সদস্য ভ্লাদিমির বিদেনভকে হোটেলের দোতলায় নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, যখন তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল অনেকগুলো ওয়াইনের খালি বোতল।  

আর এর ঠিক দুইদিনের মাথায়, শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) হোটেলের নিচে বিপুল পরিমাণ রক্তের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায় পাভেল আন্তোভের নিথর দেহ। 

ওড়িশা পুলিশের সাউথ ওয়েস্ট রেঞ্জের ডিআইজি রাজেশ পণ্ডিত জানান, এই চারজনের দলটির মধ্যে দুইজনের পরপর মৃত্যু হলেও তারা এর মধ্যে এখনও সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পাননি।  

তিনি বলেন, 'প্রাথমিক তদন্তে আমরা ধারণা করছি তিনতলায় নিজের ঘর থেকে ঝাঁপ দিয়েই ৬১ বছর বয়সী পাভেল আন্তোভ আত্মহত্যা করেছেন। আমরা তদন্তে অবশ্য সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি এবং দূতাবাসের মাধ্যমে মৃতদের পরিবারের কাছে খবর পাঠিয়েছি।' 

মিখাইল ও নাতালি নামে ওই রুশ পর্যটক দলের বাকি দুইজনকেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত রায়গড় ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এদিকে দুই দিনের মধ্যে পরপর দুই জন বিদেশি পর্যটকের মৃত্যুর পর ওই হোটেলের ম্যানেজারসহ একাধিক কর্মী বার্তা সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়ে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মদ্যপান করে ও মানসিক অবসাদে ভুগেই এরা মারা গেছেন বলে তারা প্রায় নিশ্চিত।  

সাই ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের একজন কর্মী জানিয়েছিলেন, নিহত ওই দুই জনই আসার পর থেকে প্রচুর মদ খাচ্ছিলেন। এর মধ্যে একজন হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় তার বন্ধু ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়েন, তিনি নিজের হুঁশেই ছিলেন না। খুব কাছ নিজের বন্ধুর অন্তিম সংস্কার দেখার সময়, বন্ধুর মরদেহ জ্বলতে দেখার সময় থেকেই তিনি খুব অদ্ভুত আচরণ করছিলেন। বন্ধুর ওই পরিণতি দেখার পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে খুব ডিস্টার্ব ছিলেন, সে জন্যই বোধহয় আত্মহত্যা করেছেন।  

ওই হোটেলেরই আর একজন কর্মী জানান, তারা ধারণা করছেন মৃতদের মধ্যে প্রথমজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং দ্বিতীয়জন প্রিয় বাল্যবন্ধুর মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দিয়েছেন। 

এদিকে ভারতে রুশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ওড়িশায় তাদের দুই জন নাগরিকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ট্র্যাজিক পরিণতির ব্যাপারে অবহিত এবং তারা মৃতদের পরিবার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছে।  

তাদের জানা মতে এই ঘটনার সঙ্গে যে কোনও অপরাধের সম্পর্ক নেই, দূতাবাসের বিবৃতিতে সে কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে যেহেতু বহুবার 'হিট জব' চালানোর, অর্থাৎ সমালোচকদের গোপনে শেষ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাই রায়গড়ার জোড়া মৃত্যু নিয়েও সন্দেহ থাকছেই।  

পাভেল আন্তোভের মতে একজন ধনী ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বন্ধুদের নিয়ে ছুটি কাটানোর জন্য কেন রায়গড়ার মতো অখ্যাত জায়গাকে বেছে নিয়েছিলেন, উত্তর মেলেনি সে প্রশ্নেরও।  

সুত্রঃ বিবিসি

ইত্তেফাক/ডিএস