সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইত্তেফাকের উপহার পেয়েছিলেন পেলে

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০৪

এই কষ্ট কখনোই ভোলা যাবে না। সারা জীবন আফসোস থাকবে। অল্পের জন্য পেলের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল। পেলের বাসায় গিয়েও একটুর জন্য দেখা হয়নি। পেলে খবর পেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে রিও অলিম্পিক গেমস ২০১৬ কাভার করতে আসা একজন সাংবাদিক এসেছেন। হাতে উপহারসামগ্রী। তখন তিনি বাসায় নেই। বাসার কেয়ারটেকার কোনো কথা বলতেও রাজি নন। শুধু জানালেন, পেলে বাসায় নেই। কাল রাতে ছিলেন এখানেই। আজকে সকালে বেরিয়ে গেছেন। আসবেন কি না, বলা যায় না। উপহারগুলো রাখার অনুরোধ করলে সরাসরি না করে দিয়েছেন। অনুরোধে সম্মতি দিয়ে পরদিন আসতে বললেন।

দ্বিতীয় দিন গেলে সেই কেয়ারটেকার ইত্তেফাকের দেওয়া উপহার রাখতে রাজি হলেন। ব্রাজিলিয়ান ট্যাক্সি ড্রাইভার সঙ্গে ছিলেন বলে কেয়ারটেকার কথা বলতে পেরেছিলেন। ব্রাজিলিয়ান ট্যাক্সি ড্রাইভার ইংরেজি বোঝেন। বলতেও পারেন। তাই আলাদা করে ডলার দিতে হলেও সেটি গায়ে লাগেনি, পেলের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছেন বলে।
 দ্বিতীয় দিন বাড়ির কেয়ারটেকার জানালেন, তার সঙ্গে পেলের কথা হয়েছে। তাই উপহার রাখতে অসুবিধা নেই। পেলের ছবি ছাপানো একাধিক ইত্তেফাক পত্রিকা, ইত্তেফাকের কলম, মগ, ফুটবল, ক্রিকেট নিয়ে রিপোর্ট, জাতীয় পতাকাসহ আরো কিছু উপহারসামগ্রী একটা ব্যাগে ভরে দেওয়া হয়েছিল। কেয়ারটেকার খুব খুশি মনেই সব বুঝে নিলেন। চেক করলেন কী কী রয়েছে সেখানে। নিষেধ রয়েছে এমন কিছু আছে কি না। দ্বিতীয় দিন একটু খোলা মনেই কথা বলেছেন তিনি। ট্যাক্সি ড্রাইভারের মাধ্যমে কথা বলতে গিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করা কঠিনই ছিল। তার পরও প্রশান্তি, পেলের কাছে উপহার পাঠানো গেল বলে কথা।

অলিম্পিক গেমস হয়েছিল রিও ডি জেনোরিওতে। আর পেলের সঙ্গে দেখা করতেই মূলত অন্য শহর সাও পাওলোয় যাওয়া। বাংলাদেশে সাও পাওলো বলা হলেও ব্রাজিলিয়ানরা সাও পাওলোকে বলেন সাম্পাওলো।

পেলের বাড়ির কেয়ারটেকার গেটে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ব্রাজিলের প্রায় সব শহরেই পেলের নিজের বাড়ি রয়েছে। শুধু সাও পাওলো শহরেই পেলের সাতটা বাড়ি। উনি কখন কোন বাসায় থাকেন, সেটা বলা কঠিন। যখন যেখানে খুশি থাকেন। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে উঁচু ভবনে তাকিয়ে দেখালেন, গত এক সপ্তাহ এই বাড়িতেই ছিলেন। ঐ যে দেখুন, শোওয়ার ঘরের জানালায় ঝুলছে ব্রাজিলের পতাকা। এই ফ্ল্যাটেই থেকেছেন তিনি।’

কীভাবে পেলের সঙ্গে দেখা করা যায় জিজ্ঞেস করলে খুশি হওয়ার মতো জবাব পাওয়া গেল না। বাড়ির কেয়ারটেকার জানালেন, আপনারা যা দিয়ে গিয়েছিলেন, তা পেলের ঘরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু উনি কখন কোথায় অবস্থান করেন, সেটা আমরা জানি না। এই খবর দেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। আর যদি কখনো এ বাসায় আসেন, তাহলে দেখা করার সুযোগ নিতে পারেন। ফোন নম্বর রেখে যান। এলে খবর দেওয়া হবে।’

পেলের অপেক্ষায় অনিশ্চিত সময় কিছুদিন কাটালেও কেয়ারটেকারের ফোন আসেনি। আগ বাড়িয়ে তৃতীয় দিন পেলের বাড়িতে গেলেও সেই কেয়ারটেকার গুডমর্নিং বলেছেন, কিন্তু পেলের খবর দিতে পারেননি। ওদিকে ঢাকায় ফেরার ফ্লাইটের সময়টাও চলে এসেছিল। টিকিট পিছিয়ে দিয়ে পেলের জন্য অপেক্ষা করা যেত, কিন্তু অনিশ্চয়তায় ফুটবল সম্রাটকে স্পর্শ করার সুযোগটা নেওয়া গেল না। স্কুলের বইয়ে পড়েছিলাম ফুটবলের কালো মানিক পেলে। সেই থেকেই কালো মানিককে চেনাজানা। আর্কাইভ থেকে দেখা কালো মানিকের পায়ের জাদু হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছে। বাংলাদেশের সময় ৩০ ডিসেম্বর পেলে চলে গেলেন। সেই খবর মনে করিয়ে দিল তার বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে একবার ফুটবলের রাজাকে ছুঁয়ে দেখার আকুতি নিয়ে প্রহর গোনার কথা। আফসোস হচ্ছে, কেন সেদিন ফ্লাইট পিছিয়ে আরো অপেক্ষা করলাম না। এখন তো অনন্তকাল অপেক্ষা করলেও দেখা হবে না, তার সঙ্গে, পেলের সঙ্গে। তবু প্রশান্তির জায়গা, ইত্তেফাকের পাঠানো উপহার ঠাঁই পেয়েছিল পেলের ঘরে।

ইত্তেফাক/এসএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন