অবশেষে সাত দিন পর উদ্ধার হয়েছে ভোলার মেঘনা নদীর তুলাতলি পয়েন্টে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজ ‘সাগর নন্দিনী-২’।
রোববার (১ জানুয়ারি) সকাল সাতটার পর থেকে ডুবন্ত জাহাজটির উদ্ধার কাজ শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ট্যাংকারটি ভাসানো সম্ভব হয় বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. সেলিম।
তিনি প্রতিবেদকে জানান, দেশীয় প্রযুক্তিতে দুইটি বার্জের মাধ্যমে সাগর নন্দিনী-২ কে ভাসানো হয়েছে। বর্তমানে জাহাজটি থেকে জ্বালানি তেল অপর একটি ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-৩ এ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আরেকটি ট্যাংকার রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, প্রাইভেট স্যালভেজ ও মোংলা বন্দরের জাহাজ ‘অগ্নি প্রহরী’ উদ্ধার কাজে সহায়তা করেছে।
উদ্ধার অভিযানে বিআইডব্লিউটিএর দুইজন ডুবুরিসহ পাঁচজন ডুবুরি সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন।
যুগ্ম পরিচালক আরও বলেন, তেল অপসারণের পর জাহাজটির গন্তব্য চাঁদপুর পাঠানো হবে। অপর একটি জাহাজের সাহায্যে টেনে সাগর নন্দিনী-২ নৌযানটি ডকইয়ার্ডে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সাধারণত দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এ ধরনের জাহাজ উদ্ধার সম্ভব। কিন্তু মেঘনা নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় ডুবুরিরা ঠিক মতো কাজ করতে পারেননি। তাই অভিযানে একটু সময় বেশি লেগেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা জাহাজটির তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও তদন্ত কমিটির প্রধান আসিফ মালিক জানান, ডুবে যাওয়া জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ থেকে তেল সাগর নন্দিনী-৩ জাহাজে নেওয়া হচ্ছে। নেওয়া শেষ হলে হিসেব করে বলা যাবে কি পরিমাণ তেল ভেসে গেছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোর উদ্দেশে রওনা হয়। কিন্তু পরদিন ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোলার তুলাতুলির কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি নৌ-যানের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। এতে তলা ফেটে জাহাজটিতে পানি ঢুকতে থাকে। এবং একপর্যায়ে ডুবে যায়।
জাহাজে মোট ১৩ জন কর্মী ছিলেন। ওই সময় তাদের চিৎকার শুনে অন্য একটি নৌ-যান এসে তাদের উদ্ধার করে। ডুবে যাওয়া জাহাজের কর্মীরা জানান, স্থানীয় জেলেরা এসে জাহাজের তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কিছু তেল মেঘনায় ছড়িয়েও পড়ে।
জাহাজটির তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন ছিলো। এর মধ্যে ডিজেল আট লাখ ৯৮ হাজার লিটার এবং অকটেন দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার ছিলো। যার বাজার মূল্য ৯ কোটি টাকার বেশি।
এ ঘটনায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি, বিআইডব্লিউটিএ এবং পেট্রোবাংলা পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা হয়নি। দুর্ঘটনার পর সাগর নন্দিনী-২ এর মাষ্টার বাদী হয়ে ভোলা মডেল থানায় একটি জিডি করেছিলেন।