শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শাহজালালে উড়োজাহাজ চলাচলে ঝুঁকি

পাখি আতঙ্কে পাইলটরা

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:০০

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়ন্ত উড়োজাহাজে পাখির আঘাত ঠেকাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে দুর্ঘটনা থেকে নিস্তার মিলছে না। উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় পাইলটরা ভুগছেন পাখি আতঙ্কে।

গত পাঁচ মাসে শুধু শাহজালালে বিমানের সঙ্গে উড়ন্ত পাখির ২৭ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বহু ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছে। পাইলটদের দক্ষতায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বার্ড স্ট্রাইকে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শঙ্কা রয়েছে বড় দুর্ঘটনার। পাখি তাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো শটগান বা আধুনিক প্রযুক্তি নেই। নেই প্রশিক্ষিত বার্ড শুটার ও পর্যাপ্ত বন্দুক। অস্ত্র যা আছে, তা মান্ধাতার আমলের, অধিকাংশই অকেজো।

গত কয়েক বছর ধরেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা কর্তৃপক্ষ বললেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। কেবল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরই নয়, দেশের আটটি বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকায় পাখির সঙ্গে সংঘর্ষসহ ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায়শ ঘটছে। এড়াতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজ মেরামতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২৬ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইঞ্জিনে পাখির আঘাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সর্বাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাইলট অবশ্য বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হন, এতে প্রায় ৮৭ জন যাত্রী ছিলেন। পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। বার্ড হিটের কারণে কোনো ভয়াবহ দুর্ঘটনা না ঘটলেও এখন পর্যন্ত উড়োজাহাজের ক্ষয়ক্ষতি শনাক্ত করতে পারেনি বিমান।

এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণের সময় পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি। সেই সময় ৮৫ জন যাত্রী নিয়ে পাইলট বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হন। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল ড্রিমলাইনারের।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, শীত মৌসুমে শাহজালাল বিমানবন্দরে পাখি বেশি আসে। ফলে অতিরিক্ত সতর্কতা বিবেচনায় বিমান বাহিনীর কাছে অস্ত্র চাওয়া হয়েছে। আগের চেয়ে বার্ড হিটের ঘটনা অনেক কমেছে। আরও লোকবল ও অস্ত্র কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বার্ড হিট ও বন্যপ্রাণীর কারণে অগ্নিকাণ্ডসহ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিশেষ করে শাহজালাল ও সিলেট বিমানবন্দরে প্রায়ই ‘বার্ড হিটের’ কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে উড়োজাহাজ। গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা, হুমকিতে পড়ছে যাত্রী ও উড়োজাহাজের নিরাপত্তা।

বার্ড হিটের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিমান বাহিনীর কাছে চারটি শটগান (ডাবল ব্যারেল) ধার চেয়েছে বেবিচক। এ বিষয়ে গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহকারী বিমান বাহিনী প্রধানের (রক্ষণাবেক্ষণ) দপ্তরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিমানবন্দর সূত্র বলছে, শীতকালে বিমানবন্দরের চারপাশের জলাশয়ে নতুন করে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখিরা। উড়োজাহাজ যখন আকাশে ওড়ে, তখন বিপরীত দিক থেকে পাখি আঘাত করে। পাখি এয়ারক্রাফটের ডানায় থাকা ইঞ্জিনের ভেতরে কখনো কখনো ঢুকে পড়ে। এতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আবার ইঞ্জিনে আগুনও ধরে যেতে পারে। পাখি হিট করার কারণে এয়ারক্রাফট মেরামতে কমপক্ষে এক দিন, আবার কখনো দুই দিনও সময় লেগে যায়। এতে একদিকে এয়ারক্রাফট অচল হয়ে শিডিউল বিপর্যয় হয়; অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। এ ঘটনা শুধু বিমানে বা দেশীয় এয়ারক্রাফটে হচ্ছে না, বিদেশি উড়োজাহাজেও ঘটছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বেশি ক্ষতি হয়। বড় ধরনের দুর্ঘটনার পাশাপাশি পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়। ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের পাশের লেক লিজ দিয়ে করা হয় মাছ চাষ। আছে পরিত্যক্ত ডোবা-নালা, আবর্জনা; আছে রানওয়ের সবুজ ঘাস, যা আকৃষ্ট করে পাখিদের। প্রতিদিনই মাছ আর কীটপতঙ্গ খেতে এখানে হাজির হয় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। রানওয়েতেও চলে আসে তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক বছর আগে ‘পাখি তাড়ানোর কমিটি’ করেও সমস্যার বিন্দুমাত্র সমাধান মেলেনি।

ইত্তেফাক/এমএএম