শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

লামার ম্রোপাড়ায় বার-বার হামলার নেপথ্যে

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:০২

খুবই প্রত্যন্ত একটি ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাহাড়ি গ্রাম বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রোপাড়া। সেখানে ৩৬টি ম্রো পরিবার বসবাস করে। তবে পাহাড়ি এলাকার প্রথা অনুযায়ী সরকারি খাসজমিতেই তারা সেখানে বসবাস করে। বসবাসকৃত জমি বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য তারা কখনো জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেনি। 

যে জমিতে ম্রোরা বাস করে, সেই খাসজমি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয় একটি রাবার কোম্পানি। কিন্তু ঐ জমিতে ম্রোরা বসবাস করায় কোম্পানি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারছিল না। ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে লামার সরই এলাকায় রাবারবাগান সৃজনের জন্য পাহাড় ও ছোট ছোট টিলা ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। ইজারা পাওয়া বেশ কিছুসংখ্যক ব্যক্তি একত্র হয়ে প্রায় ৪০০ একর লিজের জমি নিয়ে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি গঠন করেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বান্দরবানের বাইরের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক পদস্থ আমলা ও তাদের আত্মীয়স্বজন। তারা ইজারাপ্রাপ্ত হয়ে ভূমি জবরদখল শুরু করেন। অন্যদিকে প্রান্তিক পাহাড়ি জনগণ ভিটেহারা হয়ে জমির মালিকানা হারাতে থাকে। কারণ বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন প্রথা অনুযায়ী পাহাড়ি খাসজমিতে অনেক দিন ধরে বাস এবং নিজেদের মতো করে চাষাবাদ করে। বংশপরম্পরায় যুগ যুগ ধরে এ প্রথা চলে আসছে। দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করলেও বন্দোবস্তি নেন না। মৌজার হেডম্যানদের মৌখিক ও লিখিত নির্দেশে তারা বসবাস করেন। ১ জানুয়ারি ম্রোপাড়ায় হামলা, লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর তারই ধারাবাহিকতা।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত শাখার পরিচালক আশরাফুল আলম ও তদন্ত কমিটির প্রধান কংজরি চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এর সত্যতা পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানান। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা প্রকৃত ঘটনা সরকারকে লিখিতভাবে জানাব। আগেও জানিয়েছিলাম। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল একই জায়গায় ঘটনার পর  পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন নির্দেশনা মানলে ১ জানুয়ারি এই হামলা হতো না। তদন্ত কমিটির প্রধান কংজরি চৌধুরী স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বাস্তবায়নকারী সংস্থা না।  ঘটনার বাস্তব চিত্র আমরা সরকারকে জানাব।’ তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন এখনো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি। তিন বলেন, পার্বত্য জেলায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ঠিকভাবে কাজ করতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, গত বছর জেলা প্রশাসনের ডাকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির বাসভবনে সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে লামার সরই ইউনিয়নের তিন ম্র্রোপাড়ার বাসিন্দা ও লামা রাবার কোম্পানির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা অনুযায়ী ম্রো পরিবারগুলোকে তিন বা পাঁচ একর জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে সমঝোতাও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়েকটি পরিবার একমত না হওয়ায় সমঝোতা আর কার্যকর হয়নি। সমঝোতার সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতি জড়িয়ে যাওয়ার কারণেই সমঝোতা হয়েও তা টেকেনি। এর মধ্যেই ১ জানুয়ারি মধ্যরাতে ম্রো পল্লির বাড়িগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটল।

ইত্তেফাক/ইআ