মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশের। সামান্য যা ধরা পড়ছে, তা দিয়ে মাছ ধরার খরচই উঠছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে জেলেদের। জেলেরা বলছেন, নদীতে অসংখ্য খুঁটা ও মেহেন্দি জাল এবং নাব্যসংকটের কারণে ইলিশের এই সংকট। মৎস্য বিভাগ বলছে, নদী খননের মাধ্যমে ইলিশ চলাচলের পথগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
জানা যায়, ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন সারা দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ ছিল। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়ার কথা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। দিন-রাত খেটেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। ফলে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতীরের মাছের ঘাটগুলোতে এখন নেই আগের মতো হাঁকডাক। শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছেন ঘাটের আড়তদার ও শ্রমিকেরা। জেলেরা জানান, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে নদীতে গিয়ে যে মাছ ধরা পড়ছে, তাতে জ্বালানি তেলের খরচই উঠছে না।
ভোলার ইলিশা ঘাট এলাকার জেলে আকতার মাঝি জানান, শুক্রবার রাতে ২০ লিটার ডিজেল নিয়ে তিনিসহ সাত জন জেলে মেঘনায় ইলিশ ধরতে যান। শনিবার মাত্র ৪ হাজার টাকার মাছ পেয়েছেন। এর মধ্যে তেলের দাম পরিশোধ করতে হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকা। জনপ্রতি পেয়েছেন ২০০ টাকা। আবার কখনো তেলের দামও ওঠে না। তিনি আরো জানান, চার দিন আগে ২ হাজার ৩০০ টাকার তেল নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে মাত্র ৩ হাজার টাকার মাছ পেয়েছিলেন। এ সময় একই কথা জানান স্থানীয় কাসেম মাঝি, আবুল বাশার ও হাবিব মাঝি। তারা এখন পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন।
ইলিশা মৎস্যঘাটের আড়তদার মো. আবু তাহের, মো. আরিফ, মো. সাহাবুদ্দিন ও আবদুর রহমান জানান, প্রতি বছর এই সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। ইলিশ ঘাটগুলো থাকে জমজমাট। কিন্তু এ বছর চিত্র ভিন্ন। নদীতে ইলিশই মিলছে না। ইলিশের অভাবে ব্যবসায়ীরা এখন শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছেন। তারা জানান, ভোলা জেলার ২ লাখেরও বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মৎস্য আহরণ করে। প্রতি বছর এই সময় মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিললেও এ বছর তা মিলছে না। দিনে দিনে এই সমস্যা আরো প্রকট হবে।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, ইলিশ গভীর পানির মাছ। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে অনেক ডুবচরের সৃষ্টি হয়েছে। ইলিশের চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ইলিশের আগমন কমে গেছে। জেলেরাও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। তিনি জানান, এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর। দ্রুত সময়ের মধ্যে ডুবোচরগুলো খননের আওতায় এনে ইলিশ চলাচলের রুটগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।