বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বসে যাচ্ছে জোশীমঠ, বাড়িতে ফাটল, শহর ভাঙা হতে পারে

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:২৬

ভয়ংকর অবস্থায় উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ। ৬৮৭টি বাড়ি ও রাস্তায় ফাটল। এই বাড়ি ভাঙা হবে। বসে যাচ্ছে শহর। পরিবেশগত সংকটের মুখে জোশীমঠ। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শহর বসে যাচ্ছে। 

উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং জানিয়েছে, জোশীমঠ প্রতি বছর আড়াই ইঞ্চি করে বসে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর। ইতিমধ্য়েই জোশীমঠের ৬৮৭টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। দুইটি হোটেলের অবস্থা খুব খারাপ। 

ভয়ংকর অবস্থায় উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ।

রাস্তায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শহরকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। ভয়ংকরভাবে বিপজ্জনক, যার মধ্যে ওই ৬৮৭টি বাড়ি আছে। বিপজ্জনক, যেখানে থাকা বাড়িতেও ফাটল দেখা দিতে পারে বা তা ভেঙে পড়তে পারে। আপাতত নিরাপদ, যে সব জায়গায় এখনই বিপদের কারণ নেই।

কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবারই (১০ জানুয়ারি) ৬৮৭টি বাড়ি ভেঙে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভের ফলে তারা ভাঙার কাজ শুরু করতে পারেনি। দুইটি হোটেল মাউন্টেন ভিউ ও মালারি ইন একে অপরের দিকে হেলে পড়েছে। সেই দুই হোটেল কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে ভাঙতে চায়।

রাস্তায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।

শুধু জোশীমঠ নয়, তার নিচের কিছু এলাকাতেও বাড়িতে পাটল দেখা দিয়েছে। এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জোশীমঠের ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। চার হাজার মানুষকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেনাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বেশ কিছু ভাঙার কথা ছিল। কিন্তু বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা  প্রতিবাদ জানান। তারা জানান, তারা সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন। এখন সব ভেঙে দিলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আর ভাঙার কাজ শুরু করা যায়নি।

শুধু জোশীমঠ নয়, তার নিচের কিছু এলাকাতেও বাড়িতে পাটল দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ, তপোবনে নাশনাল হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্টের কাজ চলছে। তার জন্যই জোশীমঠের এই অবস্থা হয়েছে। সেখানে কাজের জন্য পাহাড় ভাঙা হচ্ছে, আর তার প্রভাব জোশীমঠে পড়ছে। গত মাসে তারা মুখ্যমন্ত্রীকে তিনবার চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। 

থার্মাল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, তাদের কাজের সঙ্গে জোশীমঠের বাড়িতে ফাটল বা তা বসে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কেন এমন হলো তা তদন্ত করতে ইতোমধ্যে একটি কেন্দ্রীয় দল গঠন করা হয়েছে। তাদের পরামর্শেই জোশীমঠে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ভাঙা হচ্ছে। 

তপোবনে নাশনাল হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্টের কাজ চলছে।

তারা মনে করছেন, পরিকল্পনাহীন নগরায়নের কারণেই এই অবস্থা হয়েছে। ভূতাত্ত্বিক হর্ষ ভাট দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে তপোবন হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্টে সুড়ঙ্গে ফুটো হয়ে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়। সেই জল আবার পূরণ হয়েছিল কি না তা জানা নেই। এছাড়া অলকনন্দা নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় প্রচুর ভূমিধস হয়েছে।

২০১০ সালে স্টেট ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রধান পীযূষ রাওতেলা একটি নিবন্ধ লিখে জানিয়েছিলেন, তপোবন হাইড্রোপাওয়ারের টানেলে ফুটোর জন্য প্রতি সেকেন্ডে ৭০০ থেকে ৮০০ লিটার জল বেরিয়ে যাচ্ছে। দিনে বেরোচ্ছে ৭০ মিলিয়ন লিটার।

২০০৯ সালে তপোবন হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্টে সুড়ঙ্গে ফুটো হয়ে প্রচুর জল বেরিয়ে যায়।

এছাড়া ২০২১ সালে চামোলি জেলায় ভঙ্কর তুষারধস হয়। তাতে ২০০ জন মারা যান। তপোবন পাওয়ার প্লান্টের একাংশ ধসে য়ায়। ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মিশ্র কমিটি জানিয়েছিল, জোশীমঠ ভূমিধস এলাকায় আছে। সমানে বাড়িঘর তৈরি হলে জোশীমঠ ধসে য়েতে পারে।

এখন জোশীমঠের পরিস্থিতি নিয়ে নানা ধরনের সমীক্ষা হচ্ছে। কারণ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু জোশীমঠ তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হিমালয়ের বুকে যেভাবে উন্নয়নের কাজ চলছে, একের পর এক বাঁধ দেয়া হয়েছে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হয়েছে, নির্বিচারে বাড়িঘর হয়েছে, তার বিপুল প্রভাব পরিবেশের উপর পড়েছে।

  এছাড়া ২০২১ সালে চামোলি জেলায় ভঙ্কর তুষারধস হয়।
পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করছেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ কানে তুলছে না।

ইত্তেফাক/ডিএস