বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব উপলক্ষে ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এতে রাজধানীতে যানজট বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরা, বিমানবন্দর সড়ক ও বনানীতে তীব্র যানজট দেখা যায়। খিলক্ষেত এলাকায় যানজটে আটকে থাকা গাড়ির সারি কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা ছাড়িয়ে যায়। উত্তরায় গাড়ি প্রবেশ করতে না পারায় বিমানবন্দর এলাকায়ও যানজট ছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ইজতেমার কারণে সড়ক বন্ধ থাকায় ও টঙ্গীতে একটা সড়কে ইউটার্ন দেওয়ায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এদিকে যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি অনেক পাইলট, ক্রু ও বিমানযাত্রী। ফলে সকাল থেকে বেশ কিছু ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে উড্ডয়ন করতে পারেনি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান বলেন, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা ও দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে তুরাগতীরে জড়ো হচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে সড়কে। গাড়ি চলাচলের জন্য টঙ্গীতে একটা সড়কে ইউটার্নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই ইউটার্নের কারণে গাড়ি চলাচলে ধীরগতি হচ্ছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে যানজট নিরসনে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, যানজটের কারণে অনেককে ফ্লাইট ধরার জন্য মহাখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত হেঁটে যেতে দেখা গেছে। মূলত বুধবার দিবাগত রাত ২টা থেকে এই যানজট শুরু হয়। সকালে তা তীব্র আকার ধারণ করে। সকাল পৌনে ৮টায় সরেজমিনে দেখা যায়, খিলক্ষেতে যানজটে আটকে আছে আবদুল্লাহপুরগামী যানবাহন। সড়কের অপর পাশে আব্দুল্লাহপুর থেকে বনানীগামী লেনেও দেখা যায় ধীরগতি। অনেক মানুষকে গাড়ির অপেক্ষায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে ধীরগতিতে চলা গাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন গন্তব্যের বাসে উঠতে।
বেলা ১১টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় দেখা যায়, মহাখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে উত্তরাগামী লেনে যানবাহন কার্যত স্থবির হয়ে আছে। অনেক যাত্রী গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন। বিমানবন্দর এলাকা ছাড়িয়ে মহাখালী, রামপুরা ও মিরপুর রুটে কালশী পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে এই যানজট।
কুড়িল বিশ্বরোড, নর্দ্দা, নতুন বাজার ও বাড্ডা এলাকায় দেখা গেছে, কয়েক শ মানুষ যানবাহনের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র যানজটের কারণে গণপরিবহন থেমে থাকায় তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেককে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে।
ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়ক বন্ধ :বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব সামনে রেখে ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। সড়কটিতে যানজট কমাতে এবং মুসল্লিদের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয় এই পদক্ষেপ। আশুলিয়ার বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ইজতেমার কারণে এই সড়কে চাপ বেড়ে যাওয়ায় মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দানে যেতে সমস্যা হচ্ছে। তাই আপাতত সড়কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ ও কামারপাড়ার দিকে চাপ কমে গেলে সড়ক স্বাভাবিক করে দেওয়া হবে।
প্লেন ছেড়েছে দেরিতে :এদিকে যানজটে পড়ে অনেক বিমানযাত্রী ঠিক সময়ে বিমানবন্দরে যেতে না পারায় এয়ারলাইনস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ফোন করে ফ্লাইট বিলম্বে ছাড়ার অনুরোধ করেন। আর এ কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও ট্রাফিক পুলিশের কাছে ফোন করে বিমানযাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে। একটি বেসরকারি এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, সকাল ৯টা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের ফ্লাইটে ৫৩ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৭ জনই ফোন করে ফ্লাইট পেছাতে বলেছেন। বাধ্য হয়ে ফ্লাইটটি প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। শুধু তাই নয়, সকাল থেকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের অধিকাংশ ফ্লাইটই এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, যানজটের কারণে শুধু যাত্রীই নয়, বিমানের ক্রু-পাইলটরাও নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটের ক্রুদের বহন করা গাড়ি নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে না পৌঁছানোর কারণে তাদের ফ্লাইট তিন ঘণ্টা পর উড্ডয়ন করে।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সকাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর, কক্সবাজার, কলকাতা, কুয়ালালামপুর ও নেপাল রুটের ফ্লাইট ১ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরিতে উড্ডয়ন করে। কুয়াশার কিছুটা প্রভাব থাকলেও মূলত যানজটের কারণে অভ্যন্তরীণ রুটের ৩০টিরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বে ছেড়েছে।