বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বারো দিনে পাঁচ সেন্টিমিটার ধসে গেছে জোশীমঠ

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৬

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ শহরের একটা বড় অংশ সম্পূর্ণভাবে ধসে যেতে পারে। কার্টোস্যাট উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছে, মাত্র ১২ দিনের মধ্যে হিমালয়ের ওই ছোট শহরটি পাঁচ সেন্টিমিটারেরও বেশি ধসে গেছে।

গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ওই শহরটি নয় সেন্টিমিটার ডেবে গেছে বলেও জানিয়েছে ইসরোর অধীন ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে দ্রুত ধসে যাচ্ছে গোটা জোশীমঠ শহর আর তার আশপাশের এলাকা।

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো

জোশীমঠের কাছেই রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা বড় ছাউনি। চীন আর ভারতের মাঝে যে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এল এ সি আছে, সেখানে নজরদারি চালান এই ছাউনিতে থাকা সেনা সদস্যরাই। সেনা ছাউনির ২৫ থেকে ২৮টি ভবনেও ফাটল ধরেছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে। 

এক সংবাদ সম্মেলনে পাণ্ডে জানিয়েছেন, ছাউনি থেকে সেনা সদস্যদের একটা অংশকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাহিনীর কতজনকে সরানো হয়েছে, তা জানান নি তিনি। সংবাদ সংস্থা এএনআই পাণ্ডেকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে ওই ছাউনি থেকে সব সেনা সদস্যকেই আউলিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

জোশীমঠের কাছেই রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা বড় ছাউনি।

এতদিন মনে করা হচ্ছিল, ফাটল ধরে যাওয়া বাড়িগুলো ভেঙে ফেললেই বোধহয় সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু ইসরোর সর্বশেষ বিশ্লেষণ দেখে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে আদৌ শহরটিকে  রক্ষা করা কি সম্ভব হবে?

পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) একের পর এক টুইট করে সেই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, মেরামতের কোনো সুযোগই আর নেই, কোনও রিভার্স গিয়ার দেওয়াও সম্ভব নয়।

ফাটল ধরে যাওয়া বাড়িগুলো ভেঙে ফেললেই বোধহয় সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু ইসরোর সর্বশেষ বিশ্লেষণ দেখে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে আদৌ শহরটিকে  রক্ষা করা কি সম্ভব হবে?

তিনি প্রকৌশলীদের ওপরেই সব দোষ চাপিয়ে লিখেছেন, ইঞ্জিনিয়াররা না বোঝেন ভূ-বিজ্ঞান, না জানেন ভূগোল। কোন মাটি খোঁড়া যেতে পারে, সেটাও তারা জানেন না কারণ তাদের পাঠ্যক্রমে এগুলো শেখানোই হয় না।

প্রকৌশলীদের দিকে ঝায়ের আঙুল তোলার কারণ, জোশীমঠের কিছুটা দূরে যে তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে, তার জন্য একটা ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, যার ফলে জোশীমঠের নীচে থাকা কোনও জলপ্রবাহ ফেটে গেছে বলে স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করছেন।

জোশীমঠের কিছুটা দূরে তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।

যদিও ওই প্রকল্পটি নির্মাণ করছে যে সরকারী জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন, তারা একথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, সুড়ঙ্গ কাটার সময় কোন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয় নি। এদিকে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে জোশীমঠের দুইটি হোটেল ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। 

ওই দুটি হোটেল হেলে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে একে অপরের খুব কাছে চলে এসেছে। একটি হোটেলের মালিক ঠাকুর সিং রাণা বিবিসিকে বলেন, '২০১১ সালে হোটেলটা বানাতে আমার খরচ হয়েছিল সাত কোটি টাকা। মূল্য বৃদ্ধির পরে এখন কত দাম হতে পারে ভেবে দেখুন। আমি আরও অন্তত দশ বছর কাজ করতে পারতাম। সরকারের তো উচিত এইসব ভেবে আমাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।'

যদিও ওই প্রকল্পটি নির্মাণ করছে যে সরকারী জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন, তারা একথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, সুড়ঙ্গ কাটার সময় কোন বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয় নি।

শহরের যে প্রায় ৭০০ টি বাড়িতে ইতোমধ্যেই বড় বড় ফাটল দেখা গেছে, সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে বলে শুক্রবার মন্ত্রীসভার এক বৈঠকের পরে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এখনও পর্যন্ত ৯৯ টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান ধামি।

এরকমই একজন দুর্গা প্রসাদ সাকলানি। তিনি বিবিসিকে বলেন, 'কেউ ফোন করে খোঁজ খবর নিলেই বিরক্তি লাগছে। আত্মীয়স্বজনরা ফোন করছেন, কেমন আছি আমরা জিজ্ঞাসা করছেন। কথা বলতেই ইচ্ছা করছে না আমার। সবাইকে বলছি আজ রাতটা যদি বেঁচে থাকি কাল জানাব কেমন আছি।'

সুত্রঃ বিবিসি

ইত্তেফাক/ডিএস