মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

নদী দূষণে বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার জেলে জীবন

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:০৩

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন আর সেই পরিচয় দিতে পারি না। নদীতে এখন আর রুপালি ইলিশ মিলছে না। সারাদিন পরিশ্রম করেও দেখা মিলে না কোন মাছের। পাথওয়ে স্বেচ্ছাসেবী টিমের সাথে জেলেদের কথায় উঠে আসে এমন চিত্র। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রাবনাবাদ নদীতে শতাধিক জেলেদের সাথে কথা বলেন পাথওয়ে স্বেচ্ছাসেবী টিম। জেলেরা তাদের জানান দুর্বিষহ জীবন কাহিনি।

ভোলা থেকে আসা জেলে মোকলেস মিয়া জানান, ২০ দিন ধরে রাবনাবাদ নদীতে মাছ ধরার জন্য আসছেন কিন্তু এখনও কোনো মাছের দেখা মিলছে না। ৪ সন্তান ও বৃদ্ধ মা এবং স্বামী-স্ত্রীসহ ৭ জনের পরিবার। এক মেয়ে এসএসসি পরীক্ষর্থী ও ছোট মেয়ে ষষ্ট শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হবে। স্কুল ব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনার মতো সামর্থ নেই। ঘরে ভাত নেই। এক দুর্বিষহ জীবন।

কথা হয় রহিমা বেগমের সাথে। তিনি মান্তা সম্প্রদায়ের। সন্তান স্বামীসহ নদীতেই বসবাস। দীর্ঘদিন নদীতে মাছের দেখা মিলছে না। চরম অভাব অনটনে কাটছে জীবন। ষাটোর্ধ্ব জেলে সোবাহান জানান, পেটের দায়ে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে এই নদীতে মাছ ধরেন। কিন্তু কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না। হঠাৎ করেই যেন কয়েক বছরে মাছ উধাও হয়ে গেছে। অথচ ১০ বছর আগেও ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পরতো।

এমন পরিস্থিতির কারন কি?

এমন প্রশ্নের জবাবে অনেক জেলেই দিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন উত্তর। কেউ কেউ তাপবিদ্যুৎ কে দায়ী করছেন। আবার কেউবা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কথা। কেউ বলছেন মারাত্মক নদী দূষণের কথা। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, প্লাস্টিক, তেল মবিলসহ নানা ধরনের নদী দূষণকারী পদার্থের কথা জেলেদের মুখ থেকে উঠে এসেছে।

নদী দূষণের জন্য কারা দায়ী?

এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি অধিকাংশ জেলে। তবে তারা নিজেদের সচেতনতার অভাবের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। নদীকে দূষণমুক্ত করতে জেলেদের সচেতন করতে হবে। অধিকাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।

পাথওয়ে স্বেচ্ছাসেবী টিম কলাপাড়া টিম লিডার তামিম জানান, নদী দূষণমুক্ত করতে এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে আমাদের নদীকে পরিস্কার রাখতে হবে। যত্রতত্র নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। ইঞ্জিনবাহী ট্রলার থেকে তেল নিঃসৃত হয়ে নদী দূষণ হয়ে যাচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ও নদীকে দূষণমুক্ত করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে এই বিষয়ে নজর দিতে হবে।

ইত্তেফাক/এসসি