শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

অগ্রযাত্রায় প্রয়োজন সকলের হাত 

আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:২৮

রাষ্ট্র পরিচালনার ভার যাহার উপর থাকে, তাহাকে সাধারণ জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান তথা জীবনের নিরাপত্তা লইয়া ভাবিতে হয়। বিশেষ করিয়া অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির দরিদ্র অবস্থা তাহাদের চিন্তার একটি বড় জায়গা দখল করিয়া রাখে। কেহ বা নানা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে দরিদ্র মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হন, আবার কেহ-বা তাহার নিজ কর্মগুণে, দক্ষতার সহিত সরকার পরিচালনার মাধ্যমে অবস্থার পরিবর্তন ঘটাইতে সমর্থ হন। ২০০৯ সাল হইতে বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রহিয়াছেন শেখ হাসিনা। বিগত ১৩ বৎসরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে ইহা অস্বীকার করিবার কোনো উপায় নাই। 

অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হইয়াছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাইয়াছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়াছে ইহাও সত্য। কিন্তু এই ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির সকল মানুষকে এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচ তালিকা হইতে বাহির করিয়া আনা সম্ভব হয় নাই। ইহা খোদ প্রধানমন্ত্রীর অজানা নহে। তাই সহায়-সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়াইবার জন্য তিনি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাইয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, ‘শুধু সরকারই নহে, আমরা সকলে মিলিয়া দেশকে উন্নয়নের পথে আগাইয়া লইব।’ সরকার প্রধানের এই উক্তি বাংলাদেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও বাস্তবসম্মত। দেশে এখন অসংখ্য বিত্তবান মানুষের উদ্ভব ঘটিয়াছে। মানুষের আয়-রোজগারের পথ বাড়িয়াছে। শুধু দেশেই নহে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য করিয়া বহু মানুষ অর্থ-বিত্ত অর্জন করিতেছে। তাহারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ দরিদ্র মানুষের পাশে আসিয়া দাঁড়াইতে চেষ্টা করিলে একদিকে যেমন দরিদ্র মানুষের আয়বৈষম্য কমিবে, অন্যদিকে সরকারের উপর অর্থনৈতিক চাপ সামান্য হইলেও কমিবে। ইতিমধ্যে বিগত এক দশকে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ছিন্নমূল হাজার হাজার মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করিয়া দিয়াছে। ইহা চলমান রহিয়াছে। কিন্তু করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অপরাপর রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশের সরকারকেও অর্থনৈতিক সংকটে পড়িতে হইয়াছে। ফলে কৃচ্ছ সাধনের কথা ভাবিতে হইতেছে। আমরা জানি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উত্তরোত্তর ভালো হইতে থাকিলেও এখনো এতটা শক্তিশালী হয় নাই, যেসব ধাক্কা স্বচ্ছন্দের সঙ্গে কাটাইয়া উঠিবে। সুতরাং এই সময় ব্যবসায়ী মহল, ধনসম্পত্শালী সম্প্রদায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াইলে তাহাই হইবে সকলে মিলিয়া দেশের অগ্রযাত্রায় অবদান রাখা। 

শুধু সরকারের দিকে তাকাইয়াই নহে, মানবতার বিবেচনাতেও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রথম শর্ত। পৃথিবীতে যতগুলি ধর্ম আছে তাহার প্রত্যেকটিতেই দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াইবার কথা জোর দিয়া বলা হইয়াছে। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল  কোরআনের সুরা দাহর ৮ ও ৯ নম্বর আয়াতে বলা হইয়াছে, ‘আর তাহারা আল্লাহকে ভালোবাসিয়া খাদ্য দান করে মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের। তাহারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করিয়াছি, তোমাদের কাছে ইহার জন্য আমরা কোনো বিনিময় চাহি না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও নহে।’ খ্রিষ্টধর্মে বলা হইয়াছে, ‘যে মানুষের সেবা করে সে যেন ঈশ্বরেরই সেবা করে (বাইবেল-৯.৪:২)। হিন্দুধর্মের ঋগ্বেদে বলা আছে, ‘সমাজকে ভালোবাসো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, দুর্গতকে সাহায্য করো, সত্য ও ন্যায়ের পথে সাহসী ভূমিকা রাখার শক্তি অর্জন করো (ঋগ্বেদ :১.১২৫.৬)। সুতরাং সরকার প্রধানের ঐ আহ্বান কান পাতিয়া শুনিতে হইবে। সকলকে লইয়া ভালো থাকিতে চেষ্টা করিলে নিজেও আরো ভালো থাকা যায়, ইহা গুণীজনেরা বলিয়া থাকেন। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত একটি স্বপ্নের বাংলাদেশে পরিণত হইবে, কিন্তু সেই জন্য প্রধান শর্ত থাকে যে, দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করিতে হইবে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু জাতির প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকা একটি জাতির উন্নয়নের প্রথম শর্ত।

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন