টানা তিনদিন ধরে নওগাঁয় বয়ে যাচ্ছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। হাড়কাঁপানো শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে কুয়াশা কমে রোদের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল হাওয়া অব্যাহত থাকায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
ঠাণ্ডায় এ জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। আড়াইশ’ শয্যার আধুনিক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১২টি বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন শিশু চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ হাসান জানান, ঠাণ্ডায় শিশুরা ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। বৃদ্ধারাও হাঁপানি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে আসা রোগীদের সাধ্যমতো সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. রায়হানুজ্জামান সরকার জানান, জেলার মতো উপজেলার হাসপাতালগুলোতেও আগের চেয়ে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ঠাণ্ডা খাবার না খাওয়ার পাশাপাশি ধুলাবালি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ছয় দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি শীত মৌসুমে সারাদেশে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল বুধবার সাত দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তার আগের দিন মঙ্গলবার নওগাঁয় সর্বনিম্ন সাত দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ৭ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে সেটিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বিরাজ করলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
অপরদিকে, কনকনে শীতের কারণে জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা। জেলা শহরের তাজের মোড় এলাকায় রিকশাচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘রোদ উঠিছে তারপরেও ঠাণ্ডায় হাত-পা ক্যান-ক্যান করছে। মনে হচ্ছে হাত-পা'র রগ জড়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডার জন্য হাত দিয়ে রিকশার হ্যান্ডেল ঠিকমতোন ধরতে পারিচ্ছি না। রিকশা চালানাই কঠিন হয়ে পড়ছে।’ তার মতো অনেকেই এখন পর্যন্ত শীতবস্ত্র পাননি।
শহরের ব্রিজের মোড়ে কাজে জন্য অন্য আরও কয়েকজন দিনমজুরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাদের একজন সদর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের অমল চন্দ্র জানান, তিন-চার দিন ধরে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বাড়ি থেকে বের হননি তিনি। আজ সকালে যদিও খুব ঠাণ্ডা লাগছে, তারপরও রোদ ওঠায় কাজ করতে বের হতে হয়েছে। চাদর গায়ে দিয়েও ঠাণ্ডা কমছে না।
বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার থেকে নওগাঁয় তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রয়েছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরের হিমেল বাতাস বয়ে যাওয়ায় রোদ উঠলেও শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। এ আবহাওয়া আরও দুই-তিন থাকতে পারে।