শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর এলাকার আনোয়ারা বেগমের স্বামী মারা গেছে ৪ বছর আগে। দুই ছেলে কাজের জন্য বাড়িতে থাকে না। এ সুযোগে গ্রামের প্রভাবশালীরা এখন তার বাড়ির ভেতর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করছেন। বিধবার ছেলের বউ মাকসুদা এ কাজে বাঁধা প্রদান করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য দোলন তাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আইনি সহায়তা চেয়ে মাকসুদা ৩ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মাকসুদা বেগমের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ভেদরগঞ্জ থানার এসআই সাইফুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান। ৩ জানুয়ারি আদালতের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গভীর নলকূপ, বসতঘর ভেঙে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করে। বর্তমানে রাস্তা নির্মাণ বন্ধ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) থেকে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৭৯৫ টাকা। মহিষা ইউপি সদস্য লিপি প্রকল্প সভাপতি হলেও কাজটি দেখাশোনা করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অরুণ হাওলাদারের চাচাতো ভাই ইউপি সদস্য দোলন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পহেলা জানুয়ারি রাস্তা নির্মাণের নামে বাড়ির উঠানে গর্ত করা হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের জন্য নলকূপ, রান্নাঘর, বসত ঘরের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন প্রভাবশালী দোলন মেম্বার ও আলমগীর ঢালী। বাড়ির ভেতর রাস্তা নির্মাণের কোনো সুযোগ না থাকলেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ির পাশে আগের রাস্তা রয়েছে। সেখানে রাস্তা না করে বিধবার বাড়ির ভেতর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করতে চাচ্ছে।
বিধবা ফাতেমা বলেন, তার এক ছেলে ঢাকা আরেক ছেলে প্রবাসে। সেই সুযোগে প্রতিবেশী সাদেক আলী হাওলাদের ছেলে দোলন মেম্বার (৫০) ও মমতাজ উদ্দিন ঢালীর ছেলে আলমগীর ঢালী (৫২) ও মোক্তার ঢালী (৪০) এবং তাদের সহযোগিরা মিলে বাড়ির ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে চান।
মহিষা ইউপি সদস্য দোলন বলেন, এ ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে আপস নিষ্পত্তির জন্য তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবার ডাকা হয়েছে। তারা না এসে উল্টো আমার নামে আদালতে মামলা দিয়েছে।
মহিষা ইউপি চেয়ারম্যান অরুণ হাওলাদার বলেন, জোর করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। এই রাস্তা দিয়ে তারা প্রায় ২০ বছর চলাচল করেন। তারপরও সবার সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন তারা মানছেন না। উল্টো ইউপি সদস্যদের নামে মামলা দিয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, রাস্তার বিষয়টি আমি শুনেছি। বাড়ির ভেতর দিয়ে রাস্তা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ভেদরগঞ্জ ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি ন্যায়সঙ্গত সমাধান হবে।