আওয়ামী লীগের জনসভা উপলক্ষ্যে রাজশাহী শহরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানে রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে এ জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে বিভাগের সব জেলা থেকে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। ট্রেনে বা বাসে করে রাজশাহীর জনসভায় যাচ্ছেন তারা।
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভার জন্য ৮টি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছেন দলটির নেতারা। এসব ট্রেনগুলো আজ সারাদিন রাজশাহী-নাটোর, রাজশাহী-জয়পুরহাট, রাজশাহী-সান্তাহার, রাজশাহী-ঢালারচর, রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ রুটে চলবে।
সকালে রাজশাহী রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা যায়, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসছেন। ফলে এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য হয়েছে। রেলস্টেশন এলাকার বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি মাদরাসা মাঠে চলে যাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ট্রেনে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা। আমাদের রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী এসেছে তাকে দেখতে না গেলে হয়? তাই চাচা-ভাতিজা সকালের ট্রেনে উঠে পড়েছি। রাজশাহীতে নেমে দেখছি বিশাল আয়োজন। চারিদিকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার। অনেক ভালো লাগলো রাজশাহীতে এসে।
ট্রেনে করে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে প্রথমে বাসে উঠেছিলাম। বাস থেকে নেমে ট্রেনের উঠি। সব জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রী ও তার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা। নির্বাচনের বছরে হওয়ায় রাজশাহীর জনসভা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী যশোর, চট্টগ্রামের জনসভাই ভোট চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে এক পলক কাছে থেকে দেখতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় জয়পুরহাট থেকে আসা রাজিব হোসেন জানান, বাসে করে রাজশাহীতে আসলাম জনসভা দেখতে। টিভি চ্যানেল, পেপার-পত্রিকায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রী আসছে, তাই অনেক সুন্দর করে রাজশাহী সাজানো হয়েছে। এসে সাজানো দেখলাম। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।
রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটু জানান, রাজশাহীর সব রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে প্রচুর মানুষ এসেছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ বাসে এসেছে।
রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম জানান, ট্রেনগুলো বিভিন্ন জয়গা থেকে ছেড়ে আসছে। এছাড়া রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। সিডিউল বিপর্যয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর বিশেষ ৮টি ট্রেন শুধুমাত্র আজকে চলবে।
জনসভা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠটি একটি ঐতিহাসিক জায়গা। এখানে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার জনসভায় ভাষণ দিয়েছেন। সেই কারণে মাদ্রাসা মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। মাদ্রাসা মাঠের পাশে যে ঈদগাহ মাঠ রয়েছে, সেটিও আমরা মাঠের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছি। এই দুটি মাঠসহ আশপাশে যত জায়গা আছে, সড়ক আছে, মাদ্রাসা মাঠ থেকে জিরো পয়েন্ট, সিএন্ডবি মোড় থেকে লক্ষ্মীপুর, ঘোষপাড়া মোড়সহ ওই সমস্ত অঞ্চলকে আমরা জনসভা মাঠ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে ২২০টি মাইক থাকবে, ১২টি এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে যাদের মাঠে জায়গা হবে না, তারা বাইরে থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পারেন, বক্তব্য শুনতে পারেন।
মেয়র বলেন, জনসভাকে কেন্দ্র রাজশাহী বিভাগে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃশ্যমান উন্নয়নগুলো একটার পর একটা উদ্বোধন করছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন, মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন, মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। এ বছর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল উদ্বোধন করবেন। সবকিছু মিলে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ মানুষেরা উৎফুল্ল। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা, তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ব্যাপক আমরা লক্ষ্য করছি। নারীদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনা ব্যাপক। জনসভায় বিপুল পরিমাণ নারী ও নতুন ভোটাররা উপস্থিত থাকবেন।
নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়ে রাসিক মেয়র বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি আমরাও নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। জনসভা মাঠে ও মাঠের বাইরে ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবে। জনসভায় আগতদের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা থাকবে। একইসঙ্গে দেড় লক্ষাধিক পানির বোতল মাঠে ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় থাকবে, যাতে কেউ চাহিবা মাত্র দেওয়া যায়। একইসাথে ওয়াসার দুটি পানির গাড়ি থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ভাষণের আগে প্রায় ১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ব্যয়ে সমাপ্ত ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং আনুমানিক ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।