বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ভারতে মন্ত্রীকে গুলি করা পুলিশ মানসিক চিকিৎসা নিচ্ছিলেন

আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:২৫

ভারতের ওড়িশায় রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নবকিশোর দাসের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন পুলিশ অফিসার (সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর) গোপালকৃষ্ণ দাস মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তিনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আউটলুক ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার (২৯ জানুয়ারি) ওড়িশার ঝাড়সুগুন্ডা জেলার ব্রজরাজনগর এলাকায় নবকিশোর দাসকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক গোপালকৃষ্ণ দাস মন্ত্রীকে নিজেই গুলি করেন। আহত মন্ত্রীকে উদ্ধার করে ভুবনেশ্বরের অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্ত্রীকে বাঁচানো যায়নি। 

ভারতের ওড়িশায় রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নবকিশোর দাসের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় সন্দেহভাজন পুলিশ অফিসার (সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর) গোপালকৃষ্ণ দাস মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

বেরহামপুরের এমকেসিজি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান চন্দ্র শেখর ত্রিপাঠি সাংবাদিকদের জানান, গোপালকৃষ্ণ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন। বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মেজাজের চরম পরিবর্তন হয়। 

তারা কখনও কখনও অতিরিক্ত উত্তেজিত এবং কখনও কখনও হতাশাগ্রস্ত হতে পারে। তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শসহ বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পুলিশ সদস্য গোপালকৃষ্ণ ৮ থেকে ১০ বছর আগে তার ক্লিনিকে গিয়েছিলেন। তিনি ক্রোধ প্রবণ ছিলেন এবং এই জন্য তার চিকিত্সা করা হয়।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) ওড়িশার ঝাড়সুগুন্ডা জেলার ব্রজরাজনগর এলাকায় নবকিশোর দাসকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ত্রিপাঠি বলেন, 'গোপালকৃষ্ণ নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলেন কি না জানি না। নিয়মিত ওষুধ না খেলে এই রোগ আবার ফিরে আসতে পারে। আমার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল এক বছর আগে।'

গোপালকৃষ্ণ গঞ্জাম জেলার জলেশ্বরখণ্ডি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি বেরহামপুর পুলিশে চাকরি করতেন। ১২ বছর আগে গোপালকৃষ্ণ বেরহামপুর থেকে ঝাড়সুগুন্ডা জেলায় বদলি হয়েছিলেন।

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নবকিশোর দাসের সফর উপলক্ষে রোববার গোপালকৃষ্ণকে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ঝারসুগুন্ডা পুলিশের এসডিপিও (সাবডিভিশনাল পুলিশ অফিসার) গুপ্তেশ্বর ভোই জানান, ব্রজরাজনগর এলাকার গান্ধীচকের একটি থানার দায়িত্ব নেওয়ার পর সহকারী উপ-পরিদর্শক গোপালকৃষ্ণকে একটি লাইসেন্সকৃত পিস্তল দেওয়া হয়েছিল।

গোপালকৃষ্ণের স্ত্রীও বলেছেন, 'আমার স্বামী মানসিক রোগের ওষুধ খাচ্ছিলেন। আমরা তার থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকতাম। সে কারণে তিনি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলেন কি না তা বলতে পারছি না।'

মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর তাকে মালা পরিয়ে দেয়ার সময় গুলি ছুড়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নবকিশোর দাসের সফর উপলক্ষে রোববার গোপালকৃষ্ণকে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এদিন তিনি নিজেই মন্ত্রীকে গুলি করেন। 

যেখানে পুলিশ কর্মকর্তা মন্ত্রীকে গুলি করেন সেখান থেকে তার মোটরসাইকেলটি প্রায় ৫০ মিটার দূরে রাখা হয়। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর তাকে মালা পরিয়ে দেয়ার সময় গুলি ছুড়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ জানিয়েছে, এদিন গোপালকৃষ্ণ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে দুইটি গুলি করেন। একটি লক্ষ্য মিস করলেও অন্যটি কিশোর দাসের বুকে আঘাত করে। পরে পয়েন্ট ফাঁকা রেঞ্জে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করেন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে অন্যদের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

কেন গোপালকৃষ্ণ মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/ডিএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন