জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে মেয়েদের ক্ষমতায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) জাতীয় কন্যা শিশু দিবসের বক্তব্যে তিনি মেয়েদের দক্ষতা বিকাশে এবং তাদের আদর্শ রূপে গড়ে তুলতে মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের কথা বলেন।
২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর দেশটিতে পালিত হয়ে আসছে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে মেয়েরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় তার মোকাবিলা করা।
দিবসটির লক্ষ্য মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা এবং তারা যে বৈষম্যের মুখোমুখি হয় তা তুলে ধরা। এ দিনটি মেয়েদের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেও পালিত হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, জম্মু ও কাশ্মীরে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দিবসটি প্রতীকীভাবে পালন করা হচ্ছিল এবং এখানে মহিলাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন সমস্যা অতিক্রম করতে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছুই করা হয়নি।
নব্বই দশকের শুরু থেকেই পাকিস্তানের সন্ত্রাসী হামলার পর, এখানকার মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে ছিল। তাদের জোরপূর্বক বোরকা পরানো হতো এবং যারা এ নিয়ম মানতে রাজি হয়নি তাদের এসিড হামলা কিংবা বন্দুকের গুলির শিকার হতে হতো।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট, জম্মু ও কাশ্মির থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর এ অঞ্চলের মেয়েদের স্বাভাবিক জীবন প্রদানের সব চেষ্টাই করে গেছে কেন্দ্র। কেন্দ্র থেকে পরিচালিত শিক্ষা প্রকল্পগুলো মেয়েদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে নিয়ে যায় এবং স্ব-কর্মসংস্থান প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে এখানকার মেয়েরা স্বনির্ভর হয়ে উঠে। এখানকার মহিলারা এখন পুরুষদের পাশাপাশি সরকারি চাকরিতেও অংশ নিচ্ছেন।
গত তিন বছরে ভারত সরকার, মেয়েদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি এবং জাতি গঠনে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। "বেটি (মেয়ে) বাঁচাও, বেটি পড়াও" এর মতো উদ্যোগ কন্যাসন্তানের জন্ম থেকে তার বেড়ে উঠা পর্যন্ত তাকে রক্ষা করার কাজ করে যাচ্ছে।
গত বছর ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল (আরজিআই) দ্বারা স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসআরএস) পরিসংখ্যান প্রতিবেদন, ২০২০ অনুসারে, জম্মু ও কাশ্মিরে কন্যাশিশু জন্মের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য টিউশন ফি তে ছাড় দেওয়া হয়েছে, যাতে করে ৫৫ লাখেরও বেশি মেয়ে উপকৃত হয়েছে। বিদ্যালয় থেকে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার কমাতে গ্রামীণ এলাকায় ৮৫টিরও বেশি কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় এবং সমান সংখ্যক মেয়েদের হোস্টেল স্থাপন করা হয়েছে।
"আজাদি কা অমৃত মহাউৎসব" এর একটি অংশ হিসেবে চালু হওয়া সুপার-৭৫ বৃত্তি প্রকল্পটি দরিদ্র পরিবারের অনেক মেধাবী মেয়েকেও স্পনসর করেছে, যারা মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (আইটিআই) এবং মানবিকে দক্ষতা অর্জনের মতো পেশাদার শাখায় ভর্তির চেষ্টা করছিল। এ প্রকল্প তরুণ মহিলাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে পেশাদার কলেজে ভর্তি হতে সাহায্য করেছে।
তেজস্বিনী মিশন যুব কর্মসূচির অধীনে একটি স্কিম চালু করা হয়, যেখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মেয়েদেরকে তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। তহবিল প্রদানের পাশাপাশি, সরকার (এই প্রকল্পের অধীনে) প্রকল্পের ১০ শতাংশ খরচ বহন করে এবং ঋণের বার্ষিক সুদ প্রদান করে।