শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিলেটে হোটেলে পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ

আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৩

দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, হাওর, খাল-বিল, অরণ্য, চা বাগান বা হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) মাজার- কী নেই সিলেটে। পরিবার বা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পর্যটন মৌসুমসহ সারা বছরই পর্যটকে সরগরম সিলেট। সেটাকে পুঁজি করে সিলেটের কিছু কিছু গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেল অধিক মুনাফার জন্য পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা এবং হয়রানি করছে। এসবের প্রতিবাদ করলে হতে হয় লাঞ্ছিত ও অপদস্থ। রেহাই পাচ্ছেন না নারী পর্যটকও।

এমনই একটি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। অভিযোগ রয়েছে, বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের সঙ্গে হোটেল বুকিং নিয়ে নিয়মিত প্রতারণা করে আসছে ‘দ্যা গ্রান্ড হোটেল’। যার অবস্থান সিলেটের প্রাণকেন্দ্র হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের মূল গেটের পূর্ব পাশে এইচএস টাওয়ারের তৃতীয় তলায়।

সিলেটের দ্যা গ্রান্ড হোটেল। ছবি: ইত্তেফাক

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে সিলেটের দ্যা গ্রান্ড হোটেলের ম্যানেজার বিপুল সিং এর সঙ্গে কথা হয় পর্যটক রাসেল মিয়া ও তার বন্ধুদের। তারা ২ হাজার টাকায় প্রিমিয়াম সিঙ্গেল বেডের (কাপল রুম) ১০টি রুম ও ২ হাজার ৫০০ টাকায় প্রিমিয়াম ডাবল বেডের (ফ্যামেলি রুম) ৪টি রুম নেওয়ার কথা বলেন ফোনে। পরে পর্যটক রাসেল মিয়ার নামে সিঙ্গেল বেডের ১০টি রুম ও প্রিমিয়াম ডাবল বেডের ৪টিসহ মোট ১৪টি রুম বুকিং করা হয় ২৭ জানুয়ারির জন্য। ওই দিনই দ্যা গ্রান্ড হোটেলের বিকাশ মার্চেন্ট নাম্বারে অগ্রিম বুকিং বাবদ ৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়।

বিকাশে অগ্রিম টাকা সেন্ড করার প্রমাণ। ছবি: ইত্তেফাক

পরবর্তীতে ২৭ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় পর্যটক রাসেল মিয়ার পরিবার, শাহিনের পরিবার, রাজিবের পরিবার, রফিকের পরিবার, শাখওয়াতের পরিবার, সোহাগের পরিবার, ইত্তেফাক অনলাইনের এই প্রতিবেদকের পরিবারসহ মোট ৩৮ জনকে দ্যা গ্রান্ড হোটেলে পূর্বনিধারিত ১৪টি বুকিং করা রুমের মধ্যে কাপল বেডের ৮টি ও পরিবার বেডের ৩টি রুমে উঠতে দেয়। বাকি ৩টি রুম পরিষ্কার করা বাকি আছে এবং পরিষ্কার শেষে রুমে প্রবেশ করতে দেবে বলে জানানো হয়।

পর্যটকদের হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। ছবি: ইত্তেফাক

পর্যটক রাসেল মিয়ার পরিবারসহ বাকি বন্ধুদের পরিবার ১১টি রুমে তাদের ব্যাগ-লাগেজ রেখে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহপরান (র.) ও ভোলাগঞ্জের চলে যায়। বেড়ানো শেষে বুঝিয়ে দেওয়া ১১টি রুমের মধ্যে পরিবারের জন্য বরাদ্দ ১২৩ নাম্বার রুমে উঠতে দেওয়া হয়নি এবং বাকি ৩টি রুমে পর্যটকদের উঠতে দেওয়া হয়নি। পর্যটক রাসেলের অনুমতি না নিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রুম খুলে ব্যাগ, লাগেজ ও বাচ্চদের খাবার অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। লাগেজে গচ্ছিত ছিল বেড়াতে আসা ৪০ জনের প্রায় নগদ তিন লাখ টাকা ও প্রায় ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।

পরে পর্যটক রাসেল মিয়া জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ কল দিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় পর্যটক হয়রানি, ব্যাগ-লাগেজ সরিয়ে ফেলার বিষয়টি জানায়। পরে পুলিশ ‘দ্যা গ্রান্ড হোটেল’ এসে তদন্ত করে তার সত্যতা পেলে তাৎক্ষণিক হেটেলের সহকারী ম্যানেজারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করে আসেন এই প্রতিবেদক।

লিখিত অভিযোগের কপি। ছবি: ইত্তেফাক

তদন্তের সময় দ্যা গ্রান্ড হোটেলের সহকারী ম্যানাজার শানুর পর্যটক হয়রানি, অনুমতি ছাড়া ব্যাগ-লাগেজ সরিয়ে ফেলার বিষয়টি ইত্তেফাক অনলাইন ও পুশিশের কাছে তা স্বীকার করে। আর এ বিষয়টি প্রধান কারসাজি বলে জানান।

দ্যা গ্রান্ড হোটেলের প্রধান ম্যানেজার বিপুল সিং। ছবি: ইত্তেফাক

পর্যটক হয়রানির বিষয়ে জানতে দ্যা গ্রান্ড হোটেলের মালিকের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে হোটেলের মালিক বিদেশে অবস্থান করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্যা গ্রান্ড হোটেল তাদের ওয়েবসাইট থাকা নির্ধারিত মূল্য থেকে অতিরিক্ত মূল্যে হোটেল রুম ভাড়া রাখে। পর্যটক রাসেলের বরাদ্দ করা বাকি ৩টি রুম বেশি দামে অন্যদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। পর্যটক হয়রানি ও বেশি দামে একজনের রুম অন্যজনকে ভাড়া দিয়ে দেওয়া তাদের নিয়মিত কাজ।

দ্যা গ্রান্ড হোটেলের ওয়েবসাইটে তাদের রুমের ভাড়ার তালিকা। ছবি: ইত্তেফাক

দ্যা গ্রান্ড হোটেল হয়রানির বিষয়ে পর্যটক জহিরুল ইসলাম শাহিন ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিবার ও বন্ধু পরিবারের ছোট বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এখানে বিপদে পড়েছি। হোটেলের কর্মীরা আমাদের পদে পদে হয়রানি করেছে। ১২৩ নম্বর রুমে থাকা আমাদের ব্যাগ-লাগেজ ও বাচ্চাদের খাবার ছিল। লাগেজে প্রায় নগদ তিন লাখ টাকা ও প্রায় ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। পুলিশ তদন্ত করেছে।’

হয়রানির শিকার আরেক পর্যটক শান্তা ইসলাম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ‘এই শীতে রাত ১টায় বাচ্চাদের ও নারীদের রুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অনেক জিনিস হারিয়ে গেছে। শিশুরা খেতে না পেরে কান্না করছিল। কী যে একটা বাজে অবস্থা।’

কোতোয়ালি মডেল থানা, সিলেট

পর্যটক হয়রানির বিষয়ে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আলী মাহমুদ ইত্তেফাক অনলাইকে বলেন, ‘আমরা ৯৯৯-এ কল পেয়ে দ্যা গ্রান্ড হোটেল যাই এবং পর্যটক হয়রানির সত্যতা পেলে তাদের সহকারী ম্যানেজারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। এ সময় পর্যটক হয়রানির মূল হোতা ম্যানেজার বিপুল সিংকে হাতেনাতে পাইনি। এখন আমাদের বাকি তদন্ত কাজ চলছে। এই হোটেলে এর আগেও পর্যটক হয়রানি করা হয়েছে, তা শুনেছি।’

ইত্তেফাক/এসকে