মাদক পরিবহনের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় আব্দুল কুদ্দুস (৩০) নামে এক অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারী আহত হয়ে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী ও উপঅর্থ সম্পাদক আহসান হাবিব ইমন অবস্থান করছিলেন। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আজিজুল হক ইত্তেফাককে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অটোরিকশাচালক পটুয়াখালীর কাউখালী উপজেলার কোনাহোড়া এলাকার আব্দুল মজিদ শিকদারের ছেলে। তিনি সাভারের কলমা এলাকায় ভাড়া থেকে অটোরিকশা চালাতেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আনা হয়। এসব মাদক বহনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো ছ ৭১-৪৫৪৫) ব্যবহার করা হয়। গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাদক নিয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সটি চালাচ্ছিলেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। এছাড়া রিকশায় থাকা এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা গুরুতর আহত হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা মাদকের মধ্যে ১২টি মদের বোতল ভেঙে যায়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী ও উপঅর্থ সম্পাদক আহসান হাবিব ইমন অবস্থান করছিলেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র।
জাবির পরিবহন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘ভাসানী হলের পূনর্মিলনীর জন্য হলের প্রাক্তন-বর্তমানরা মিলে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদকদ্রব্য পরিবহন করছিল বলে জেনেছি। তখন বিপিএটিসির সামনে অ্যাম্বুলেন্সটি একটা রিকশায় ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার রাতেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। আইনগতভাবে অ্যাম্বুলেন্স কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করতে পারবে সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এজন্য গাড়িটি পুলিশ জব্দ করেনি। কারণ আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সংকট রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার রিপন হাওলাদার আমাকে জানায় গাড়িতে মাদক আছে জানতে পেরে সে ঘাবড়ে যায়। ফলে দুর্ঘটনা হয়। ঘটনার পরেই মাদক আনতে যাওয়া ছাত্ররা পালিয়ে যায়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত চলমান থাকায় রিপনকে আপাতত ছুটিতে রাখা হয়েছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে মাদক পরিবহন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক রিফাত চৌধুরী বলেন, ‘সেদিন দুর্ঘটনার সময় আমিও গুরুতর আহত হই। আমার সঙ্গে ৪৬ ব্যাচের ইমন ছিল। তবে অ্যাম্বুলেন্সে মাদক ছিল না।’
সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে রিকশার দুর্ঘটনা হয়। তখন সেখানেই কুদ্দুস নামে একজন মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে স্বজনদের হাতে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হয়েছে। মামলার তদন্তকাজ চলমান রয়েছে। আমরা দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত অ্যাম্বুলেন্সটি শনাক্ত করতে পেরেছি। অ্যাম্বুলেন্সটি এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে মাদক পরিবহন ও দুর্ঘটনায় নিহতের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা জেনেছি। সিসিটিভি ফুটেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষে অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয়; তা জানি না। এখন রাষ্ট্রীয় আইনে যা হয় সেটাই হবে।’
তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরও বলেন, এটা ধামাচাপা দেওয়ার কিছু নেই। পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।