শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রাণের সন্ধানে মরিয়া উদ্ধারকর্মীরা

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:০২

সিরিয়া ও তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। কখনো-বা সন্তানের জন্য পিতা-মাতার বুকফাটা কান্না, আবার কখনো পিতা-মাতার জন্য সন্তানের আহাজারি শোনা যাচ্ছে। যারা বেঁচে আছেন তারা আপনজনদের হারিয়ে একরকম পাগলের মতো বিলাপ করছেন। দেশ দুটি যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভবনের নিচে এখনো আটকা পড়ে আছে বহু মানুষ। এ অবস্থায় প্রকৃতিও ফের রুঢ় আচরণ করছে। হিমশীতল তাপমাত্রা উদ্ধার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। তারপরও থেমে নেই উদ্ধারকর্মীরা, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন প্রাণের সন্ধান করছেন তারা। বিধ্বস্ত ভবনের ভেতরে গিয়ে বলছেন, কেউ আছেন, শুনতে পাচ্ছেন?  -দ্য গার্ডিয়ান

৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধার করার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে আসছে। নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তুরস্কের  খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহর ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। দেশটির আদানা শহরের ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের মরিয়া হয়ে খুঁজতে কংক্রিটের ভগ্নাংশ ও বিভিন্ন আসবাবপত্র হাত দিয়েই সরিয়ে ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আটকে পড়া মানুষদের জীবিত উদ্ধার করতে। প্রতিটি বহুতল ভবন যেন এখন ধ্বংসস্তূপের একেকটি পাহাড়। ‘কেউ আছেন? শুনতে পাচ্ছেন?’ কিছুদূর পর পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বারবার এমন চিৎকার করে প্রাণের খোঁজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। তুরস্ক ও সিরিয়া জুড়ে চাপা পড়া ব্যক্তিদের খুঁজতে ও উদ্ধার করতে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী, দমকলকর্মী, চিকিৎসাকর্মী, সামরিক ও বেসামরিক লোকজন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

ভূমিকম্প শুরু হলে উত্তরপশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব শহরের বাসিন্দা সাংবাদিক মোহাম্মাদ কাজমুজ ভোরের আলো ফোটার আগেই পরিবার নিয়ে শহর ত্যাগ করেন। কাজমুজ বলেন, ‘সবাই ভবনে থাকা অবস্থাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় সিরিয়া ও রুশ সরকারের বোমা হামলার শিকার হয়েছিল এই ভবনটি। আশপাশের মানুষ আতঙ্কে সবকিছু রেখে বাসা থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েছিল রাস্তায়। আশপাশের ভবন থেকে মৃতদেহ সরানো ও উদ্ধারকাজে স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে প্রায় ১২ ঘণ্টা কাজ করেছেন কাজমুজ। তীব্র শীতের পরও ইদলিবের টিকে থাকা ভবনগুলোতে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন সেখানের বাসিন্দারা। মৃত ও আহতের সংখ্যা এত বেশি যে, হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতেও আর রোগী নেওয়ার মতো অবস্থা নেই।

সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর জিন্দিরেসের আলী বাতেল তার শহরকে বাঁচাতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার, সন্তানেরা এখনো ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে। ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ শোনা গেলেও তাদেরকে বাঁচানোরে মতো কেউ নেই, উদ্ধারের কোনো চেষ্টাই করা হচ্ছে না সেখানে।’ বেঁচে যাওয়া আরেক সিরীয় নাগরিক ওসামা আব্দেল হামিদ বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার পরিবার ঘুমাচ্ছিল। আমাদের ওপর দেওয়াল ভেঙে পড়ে। তবে আমার ছেলে সেখান থেকে বের হতে পেরেছিল। বের হয়ে সে সাহায্যের জন্য চিত্কার করার পরে আশপাশের মানুষ এসে উদ্ধার করে আমাদের।’

ইত্তেফাক/ইআ