বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

সিরিয়া-তুরস্ক ভূমিকম্প

উদ্ধারকাজের ধীরগতি নিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৯

তুরস্কে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ওপর মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে এবং একারণেই সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) বিধ্বংসী ভূমিকম্পে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

বিধ্বস্ত শহরগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দুর্গত লোকজনের কাছে পৌঁছানোর জন্য সরকারের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এরকম ক্ষুব্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা দেখতে গেছেন। 

তুরস্কে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ওপর মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে।

কাহরামানমারাস শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি স্বীকার করেছেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল। এই শহরটিই ছিল দ্বিতীয় ভূমিকম্পের কেন্দ্র এবং প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে।

উদ্ধারকাজে বিলম্ব হওয়ার জন্য তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বিমানবন্দর ও রাস্তাঘাটকে দায়ী করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজ এখন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। শুরুতে বিমানবন্দর ও সড়কে কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু আজ পরিস্থিতি অনেক সহজ হয়ে এসেছে। আগামীকাল আরও সহজ হবে।

কাহরামানমারাস শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি স্বীকার করেছেন, দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল।

দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহর পরিদর্শনের সময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমাদের কাছে যা কিছু আছে তার সবই আমরা কাজে লাগিয়েছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। রাষ্ট্র তার কাজ করে যাচ্ছে।'

তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত করা ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সিরিয়ায় উত্তরাঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি।

তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত করা ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

এই ভূমিকম্পে দুটো দেশে নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রাণহানির এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে ধীরগতির অভিযোগ করছেন। পরিবারগুলো বলছে, তাদের যেসব সদস্য নিখোঁজ রয়েছে তাদেরকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় সাহায্য তারা পাচ্ছেন না।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী ইসকেন্দেরুনের আরজু দেদেগলু জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের দুইটি শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তাদেরকে উদ্ধারের জন্য তারা নিজেরাই একটি খনন যন্ত্র যোগাড় করেছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা তাদেরকে সেটি ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছে না। 

এই ভূমিকম্পে দুটো দেশে নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, 'তারা হয়তো এখন আর বেঁচে নেই। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কেউ আসেনি। তখন আমরা নিজেরা একটি ডিগার নিয়ে এসেছি। কিন্তু তারা চায় না আমরা এটা ব্যবহার করি।'

অনেকে বলছেন, ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পরেও দুর্গত এলাকায় কোনো ত্রাণ ও সাহায্য পৌঁছায়নি। তুরস্কের হাতায় প্রদেশের আন্তাকিয়া শহরে ৬৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলছেন, 'ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেছি, কিন্তু এখন ক্ষুধা আর ঠাণ্ডায় মারা যাবো।'

ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পরেও দুর্গত এলাকায় কোনো ত্রাণ ও সাহায্য পৌঁছায়নি।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এরকম দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য তুর্কী সরকারের কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিলো না।

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দলের নেতা কেমাল কিলিচাদারুগলু জানিয়েছেন, এজন্য যদি একজনকেও দায়ী করতে হয়, তাহলে তিনি এরদোয়ান। এদিকে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক ক্ষোভও তৈরি হয়েছে।

মে মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ঠিক আগে এই জরুরি অবস্থা শেষ হবে। প্রায় ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তার বিরুদ্ধে টেবিল অব সিক্স নামের যে জোট গড়ে ওঠেছে, কিলিচাদারুগলু সেই জোটের প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় তিনি সরকারের বিরুদ্ধে 'ভূমিকম্পকে প্রচারণায় ব্যবহারের' অভিযোগ এনেছেন। সিরিয়ায় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬০। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ১ হাজার ২৬২ জন মারা গেছেন।

 প্রায় ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

সরকার বিরোধীরা উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সেখানে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হেলমেটস নামের একটি সংগঠন। তারা জানিয়েছে, এসব অঞ্চলে ভূমিকম্পে ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।

হোয়াইট হেলমেটস সতর্ক করে দিয়েছে, এখনও শত শত পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ফলে নিহতের সংখ্যা যে আরও বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সাংবাদিকরা বলছেন, যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। 

সরকার বিরোধীরা উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে সেখানে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে হোয়াইট হেলমেটস নামের একটি সংগঠন।

এসব অঞ্চলে রুশ সমর্থিত সরকারি বাহিনী, জিহাদি, তুর্কী সমর্থিত বিদ্রোহী ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই চলছে। ভূমিকম্পে যেসব জায়গা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো সরকার বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণে। দেশটিতে ১২ বছর ধরে এসব যুদ্ধ চলছে।

এ কারণে এসব জায়গায় উদ্ধারকাজ কতোটা চলছে তার তথ্য সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলায় সিরিয়ার সরকার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। কিন্তু সেখানে কিভাবে ত্রাণ ও সাহায্য পাঠানো হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। 

এসব অঞ্চলে রুশ সমর্থিত সরকারি বাহিনী, জিহাদি, তুর্কী সমর্থিত বিদ্রোহী ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই চলছে।

এর উপায় খুঁজে বের করতে ব্রাসেলসে কথাবার্তা হচ্ছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাশার আল-আসাদকে সিরিয়ার বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকার করে না। এছাড়াও তার সরকারের ওপর ইইউ বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। 

ফলে সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে তাদের তেমন একটা যোগাযোগও নেই বললে চলে। তবে ইইউর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জানানো হয়েছে, সিরিয়াতে বর্তমানে যেসব ত্রাণ সাহায্য নেটওয়ার্ক কাজ করছে সেগুলোর মাধ্যমে সাহায্য পাঠানো যেতে পারে।

ইত্তেফাক/ডিএস