বলা হয়ে থাকে, চোখ হল আত্মার আয়না, হৃদয়ের প্রবেশদ্বার, যা আপনার আবেগ এবং অভ্যন্তরীণ সত্তাকে প্রতিফলিত করে। শিশুর জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক-মানসিক এবং আবেগজনিত সব ধরনের বিকাশ হয়ে থাকে তার চোখের সাহায্যে। জন্মের পর পর শিশুরা সাধারণত ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি বেশি দূরের কিছু স্পষ্ট দেখতে পায় না। শিশুর এই দৃষ্টিশক্তির সীমা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাধারণত নবজাতককে যখন কোলে নেওয়া হয় অথবা আপনি যদি তার খুব কাছে যান তখন সে আপনাকে দেখতে পায়। আর তাই একটি ছোট শিশুর কাছে আপনার চেহারাটাই সবচাইতে আকর্ষণীয় দৃশ্য। এ সময় বেশি বেশি করে শিশুর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করবেন যাতে করে সে আপনাকে ভালো করে দেখতে পায়।
- এক মাস বয়সে
প্রথম মাসে জন্মের ঠিক পর পর একটি শিশু চোখ নাড়িয়ে কীভাবে চারপাশ দেখতে হয় তার কিছুই জানে না। তাই সে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চোখ নাড়ায় বা কখনো কখনো চোখ ট্যারাও দেখাতে পারে। এই সময়ে শিশুর খুব কাছাকাছি গিয়ে আপনি যদি নিজের মুখ খুব ধীরে ধীরে এক পাশ থেকে অন্য পাশে নাড়াতে থাকেন, তাহলে দেখবেন শিশুও আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে এবং আপনার সঙ্গে সঙ্গে সেও চোখ নাড়িয়ে আপনার মুভমেন্ট অনুসরণ করছে।
- দুই মাস বয়সে
শিশু জন্মের পর থেকে সব ধরনের রং দেখতে পেলেও তখন বিভিন্ন রঙের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য করতে পারে না। এই সময়ে শিশুর দৃষ্টিশক্তি এবং রঙের পার্থক্য শেখানোর জন্য তাকে বিভিন্ন ধরনের ছবির বই, ছবি এবং রঙিন খেলনা দিয়ে উত্সাহ দেওয়া যেতে পারে।
- চার মাস বয়সে
এ বয়সে বাচ্চার হাত বাড়ানোর মতো পেশী সঞ্চালনের ক্ষমতা গঠিত হতে থাকে এবং হাত বাড়িয়ে কোনো জিনিস ধরার কাজটি সুষ্ঠুভাবে কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে তার মস্তিষ্ক সেটা বুঝে ওঠার মতো পরিপক্ক হয়ে যায়। সাধারণত এ বয়স থেকেই শিশুরা তার যেসব ধরতে সুবিধা যেমন-মায়ের চুল, কানের দুল ইত্যাদি ধরে টান দিতে চেষ্টা করে। এই সময়ে খুব সহজেই ধরা যায় এমন কোনো নিরাপদ খেলনা শিশুর হাতে দিয়ে তার ক্রমবিকাশে সাহায্য করতে পারেন।
- পাঁচ মাস বয়সে
এই বয়সে শিশু বস্তুর আকার বুঝতে শুরু করে এবং বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। সেই সঙ্গে যে কোনো বস্তুকে তার চোখ দিয়ে অনুসরণ করতে শুরু করে। এমনকি এই বয়সে অনেক বাচ্চা যে কোনো কিছুর ছোট্ট একটি অংশ দেখেই সে বস্তুকে চিনে ফেলতে পারে। এই জন্য এই বয়সেই শিশুর সঙ্গে যখন আপনি লুকোচুরি খেলেন সেটা শিশু খুবই পছন্দ করে। এ বয়সে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের রঙের পার্থক্য আলাদা করে বুঝতে শিখে যায়।
- আট মাস বয়সে
এ বয়সে এসে শিশু দৃষ্টিশক্তিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে। যদিও কাছে থাকা জিনিসের প্রতি তার আকর্ষণ একটু বেশিই থাকে। তবু সে রুমের অন্যপ্রান্তে থাকা কোনো মানুষ এবং জিনিসপত্রের অবস্থান বুঝতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অন্যান্য যে কোনো কিছুর চেয়ে শিশুরা মানুষের মুখের অবয়ব দেখতেই বেশি পছন্দ করে। তাই যতটা সম্ভব শিশুর কাছাকাছি থেকে শিশুকে আপনার চেহারা দেখার সুযোগ করে দিন এবং আই কন্টাক্ট করুন। শিশুর বয়স যখন প্রায় এক মাসের মতো হয়ে যায় তখন শিশুর চোখের সামনে আপনি যাই আনুন না কেন সেটি শিশু খুব উত্সাহ নিয়ে দেখবে। তাই এই সময় গৃহস্থালির সাধারণ জিনিসপত্র অথবা খেলনা শিশুর কাছে নিয়ে তাকে দেখার সুযোগ করে দিন। কোনো ঝুনঝুনি অথবা উজ্জ্বল কোনো বস্তু শিশুর চোখের সামনে ধরে একপাশ থেকে অন্য পাশে নিন তারপর তা ওপর থেকে নিচের দিকে এবং পুনরায় আবার নিচ থেকে ওপরের দিকে নিয়ে আসুন। এই নড়াচড়া তাকে আকৃষ্ট করবে যদিও তিন-চার মাসের আগে বেশির ভাগ শিশুই ওপর থেকে নিচের দিকের নাড়াচাড়া ঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারে না। এছাড়া আশপাশের কোন কোন বস্তু তাকে আকৃষ্ট করে সেটা খেয়াল করুন, যেমন-ফ্যান, পাখি বা বাগানে পাতার নড়াচড়া ইত্যাদি। শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে তখন তার সামনে প্রাথমিক যে রংগুলো আছে সেগুলো নিয়ে আসুন। এছাড়াও প্রাইমারি রঙের খেলনা, রঙিন পোস্টার অথবা যেসব বইয়ে প্রচুর ছবি আছে সেগুলোও শিশুকে দেখতে দিন।
লেখক : চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।