শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৮ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৫৭

বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২২ রিপোর্ট অনুযায়ী বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে (জিএইচআই) ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। তালিকার ১২১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত দেশ। তবে এ তালিকায় বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে ভারত ও পাকিস্তান।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে যৌথভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২২ রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ। সূচকে বাংলাদেশ ২০১৪ থেকে শতকরা ২৫ দশমিক ৫ ভাগ উন্নতি করেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ৩। যা ক্ষুধা সূচকে গুরুতর বলে বিবেচিত হয়। তবে ২০১৪ সাল থেকে দেশে অপুষ্টির হার, শিশু স্টান্টিং ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত সূচকে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। ক্রমান্বয়ে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব শিগগিরই দেশ ক্ষুধামুক্ত হবে।

এ সময় আয়োজকেরা বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ উন্নতি করছে। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, ভয়াবহ বন্যা ও জলবায়ু সংকটের কারণে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়া দারিদ্র্য ও বৈষম্যের মতো বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো এরইমধ্যেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের শিকার সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম

এ বিষয়ে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীশ কুমার আগরওয়াল বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে মৌলিক খাবারের সংস্থানও অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

তিনি আরও বলেন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ‘ভবিষ্যতের সংকট এড়াতে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড আরও ন্যায়সঙ্গত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।’ এছাড়া খাদ্য ব্যবস্থার ইতিবাচক রূপান্তরের জন্য স্থানীয় সরকার ও সুশীল সমাজের শক্তিশালী পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।

ওয়েলথহাঙ্গারহিলফে বাংলাদেশের হেড অব মিশন ফাতিমা আজিজোভা বলেন, ‘সাম্প্রতিক যুদ্ধ, মহামারি এবং জলবায়ু পরিবর্তন লাখ লাখ মানুষের আর্থসামাজিক অবনতির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের জিএইচআই স্কোর অতীতের তুলনায় ভালো হয়েছে, উদ্বেগজনক মাত্রা থেকে মাঝারি মাত্রায় উন্নীত হয়েছে।’ তবে এটি বর্তমান খাদ্য ব্যবস্থা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সব স্তরে অধিকারভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার, এনজিও এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই স্থানীয় জনগণকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেইসাথে মাল্টিস্টেকহোল্ডার প্ল্যাটফর্মগুললোকে সংগঠিত করে খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্ষুধা মোকাবিলায় নীতি নির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান ফাতিমা।

আর হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম আহমেদ বলেন, বিশাল চ্যালেঞ্জ থাকার পরেও বাংলাদেশ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে এরপরও খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিয়ে  উদ্বেগ রয়েছে।

খাদ্যের প্রাপ্যতা সবসময় মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সীমিত করার প্রধান কারণ নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সব স্তরের সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্বশীলদের অবশ্যই খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের এই প্রচেষ্টার কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন ও জবাবদিহিতা রাখতে হবে।

এছাড়া ক্ষুধা ও অপুষ্টির সমস্যায় কিছু এলাকা সংকটে থাকলেও প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা হ্রাসে অগ্রগতি হয়েছে, বৈশ্বিক জিএইচআই স্কোর ২০১৪ সালে ছিল ১৯  দশমিক ১। ২০২২ সালে তা কমে দাড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২। তবে একটি সূচক অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্যালোরির যোগাড় করতে না পারা মানুষের হার বেড়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত সূচকে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি। এ সময় তিনি উল্লেখ করে বলেন, দেশ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ড. হাসান শাহরিয়ার কবির ও কৃষি গবেষণা পরিষদ বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার।

ইত্তেফাক/ইআ