ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পার্লামেন্টে ৭৫ মিনিট ধরে ভাষণ দিয়েছেন। তবে বিরোধীরা আদানি আদানি বলে চিৎকার করলেও তিনি সেই শব্দটিই তার ভাষণে উল্লেখ করেননি। উলটো তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের দিকেই দুর্নীতির তির ঘুরিয়ে দিয়েছেন। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
আদানি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকারের অবস্থান এই যে, ঐ শিল্পগোষ্ঠী সম্পর্কে যা কিছু করার, তা করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিজেপির দলগত অবস্থানও একই। তবে বিরোধীরা আদানি ইস্যুতে গত কয়েক দিন পার্লামেন্ট উত্তপ্ত করে চলেছেন।
বুধবার লোকসভায় প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ভাষণ দিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন ওঠেন, তখনই বিরোধী বেঞ্চ থেকে আওয়াজ উঠতে শুরু করল, 'আদানি! আদানি!' কিন্তু একবারের জন্যও সেদিকে যাননি মোদি। তবে মোদির ভাষণ শেষের পর বিরোধী বেঞ্চে বসে থাকা রাহুল গান্ধীকে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায়। মুখে ছিল মৃদু হাসি।
স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় শুরু করে ৫টা ১৫ মিনিটে ভাষণ শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিরোধীরা যখন মোদি-আদানি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সরব, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, 'বড় বড় দুর্নীতি থেকে মুক্তি খুঁজছিল দেশ। আজ সেসব দুর্নীতি থেকে দেশ মুক্ত।
তারপর কটাক্ষের সুরে বললেন, 'লোকসভায় গতকাল (মঙ্গলবার) কয়েক জনের মন্তব্যের পর পুরো ইকো সিস্টেম যেন নড়ে গেছে। তাদের সমর্থকরাও উল্লসিত। আমিও গতকাল দেখছিলাম। কয়েক জনের বক্তৃতার পর কিছু লোক খুশি হয়ে বলছেন, ইয়ে হুয়ি না বাত। হয়তো তারা রাতে ভালো ঘুমিয়েছেন এবং আজ (সময় মতো) ঘুম থেকে উঠতে পারেননি।'
মোদির দাবি, গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক উন্নয়ন হয়েছে দেশে। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের অর্থনীতির যখন কোমর ভেঙে যাওয়ার জোগাড়, সে সময়েও ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির কথায়, 'এটা কি গৌরবের নয়? আসলে কিছু মানুষ এমনভাবে নিরাশায় ডুবে থাকেন যে, দেশের প্রগতির কোনো কিছুই তাদের চোখে পড়ে না।' গতকাল আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম বেড়েছে।
এর মধ্যে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দর বেড়েছে ১০ শতাংশ আর আদানি উইলমার ও আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের দর বেড়েছে ৫ শতাংশ করে। গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত বাজার মূলধন কমেছিল ১১৭ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
গতকাল দিন শেষে বাজার মূলধন কমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলারে। মূলত দুইটি বিষয় শেয়ারের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শেয়ারের দাম কমে গেলেও আদানিরা বন্ড ইনডেক্সের মধ্যে বাণিজ্য করতে পারবেন।
এর আগে মঙ্গলবার কাকতালীয়ভাবে আরেকটি প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, আদানিরা ১১০ কোটি ডলারের ঋণ শোধের পরিকল্পনা করছে। এতেই বিনিয়োগকারীরা আবার আস্থা ফিরে পান।