যত সময় যাচ্ছে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের বাঁচানোর আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এদিকে স্বজন হারানোর শোকে চারদিক ভারী হয়ে উঠেছে। স্মৃতিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কে কমপক্ষে ১২ হাজার ৩৯১ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে, সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ৯৯২ ছুঁয়েছে। গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সিরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের সীমান্তে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
ভূমিকম্পে এ অঞ্চলের হাজার হাজার উঁচু ভবন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন বহু মানুষ। তাদের জীবিত উদ্ধারে নিরন্তর চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভূমিকম্প পরিস্থিতি চতুর্থ দিনে প্রবেশ করে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকে আছেন অনেকে।
প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও তুষারপাতের কারণে উদ্ধারকাজে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে সময় যত গড়াচ্ছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আর এ পরিস্থিতি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে। তাদের মতে, সরকার যথাসময়ে উপযুক্ত জবাব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ কারণে ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে যাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ধীরগতির পাশাপাশি, তারা আরও অভিযোগ করেছেন, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণের বেশ কয়েকটি শহর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় এলাকাবাসী উদ্ধার কাজে ধীরগতি ও ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উদ্ধার কাজে অনিয়ম ও বেশ কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে এরদোয়ান জানান, এত বড় দুর্যোগের জন্য কোনো পূর্ব প্রস্তুতিই যথেষ্ট নয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, 'দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কর্মীরা দেরিতে আসায় আমি হতাশ। তবে বিলম্ব হলেও উদ্ধার কর্মীরা এই মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবে কাজ করছেন। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তারা ধ্বংসস্তূপ অপসারণ ও আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কথা দিচ্ছি, কেউ গৃহহীন হবে না।'
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের ১০টি প্রদেশে তিন মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। উদ্ধার তৎপরতা ত্বরান্বিত করতে দুর্গত এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সিরিয়াতেও একই অবস্থা। দেশে ইতোমধ্যে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলোর অভিযোগ, পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছে না। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্বের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারাও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে এরই মধ্যে চলছে উদ্ধার কাজ।
তুরস্কের মতো বৈরী আবহাওয়াও এখানেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধারে দেশি-বিদেশি উদ্ধার কর্মীরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।